চারপাশে দর্শকদের গ্যালারি কানায় কানায় ভরে গেছে। সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মাঝখানের সুইমিং পুলের দিকে। পুলের মাঝখানে একজন প্রদর্শক দাঁড়িয়ে কিছু নির্দেশনা দিতেই পুলের মাঝ থেকে হটাৎ করে একসাথে লাফিয়ে উঠলো ৩-৪টি ডলফিন! প্রশিক্ষিত ডলফিনগুলো একসাথে নানা রকম কলা-কৌশল দেখাতে লাগলো। একসাথে ধনুকের মত বাঁকা হয়ে পানি থেকে লাফ দিয়ে ওঠা, একে অপরের পিছে গোল হয়ে ঘোরা আর রিংয়ের মাঝ দিয়ে লাফিয়ে পার হওয়া সহ আরও নানা ধরণের খেলা দেখাতে লাগলো ডলফিনগুলো।
ডলফিনদের এই ধরনের খেলা দেখানোকে বলা হয় ডলফিন শো। আর যে পুলের মাঝে ডলফিনরা খেলা দেখায় তাকে বলা হয় ডলফিনেরিয়াম (Dolphinarium)। ডলফিনেরিয়াম হলো ডলফিনদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অ্যাকুরিয়াম। সাধারণত বড় বড় সব থিম পার্ক, চিড়িয়াখানা বা ম্যারিন ম্যামেল পার্কের মাঝে দর্শকদের চিত্তবিনোদনের জন্য এসব ডলফিনেরিয়াম তৈরি করা হয়। এসব ডলফিন শোতে ডলফিন ছাড়াও অন্য কিছু প্রানীর মাঝে মাঝে উপস্থিতি দেখা যায় খেলা দেখানোর জন্য।
ডলফিনদের সাথে মানুষের পরিচিতি বহু বছরের। তবে ডলফিনদেরকে নিয়ে এমন শো করা শুরু হয় ১৯৩৮ সাল থেকে। ফ্লোরিডার মেরিন স্টুডিওর ডলফিনেরিয়ামে সর্বপ্রথম ডলফিনদের নিয়ে একটি শো এর ব্যবস্থা করা হয়। তখনই সবাই জানতে পারে যে ডলফিনদেরকেও ট্রেনিং দিয়ে বিভিন্ন খেলা শেখানো সম্ভব। মেরিন স্টুডিওর সফলতা দেখে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠতে থাকে ডলফিনেরিয়াম। ১৯৬০ সালের দিকে ডলফিন শো আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। ১৯৬৩ সালে ফ্লিপার মুভি এবং তারপর ফ্লিপার টিভি সিরিজের মাধ্যমে ডলফিন শো মানুষের মনে স্থান করে নেয়। সেই আমলে ডলফিন শো বিষয়ক নির্দিষ্ট কোন আন্তর্জাতিক আইন কানুন না থাকায় ইউরোপ জুড়ে ডলফিনেরিয়াম গড়ে উঠতে থাকে।
ডলফিনেরিয়ামে ডলফিনরা যাতে সুস্থভাবে থাকতে পারে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। পুলের পানিকে নির্দিষ্ট সময় পরপর ফিল্টারিং বা পরিস্রাবণ করে পরিষ্কার রাখতে হয়। পানির তাপমাত্রা আর চাপ সমুদ্রের পানির মতই রাখতে হয় যাতে ডলফিনরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে পুলের সাইজ কত বড় হওয়া উচিত তা নিয়ে একেক দেশে একেক রকম নিয়ম। European Association for Aquatic Mammals এর মতে ৫টি ডলফিনের জন্য পৃষ্টতলের ক্ষেত্রফল কমপক্ষে ২৯৬০ বর্গফুট হওয়া উচিত আর এর সাথে প্রতিটি ভিন্ন প্রাণীর জন্য ৮১০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।
ডলফিন শো এর জন্য Bottlenose Dolphin সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার গ্রুপের মতে ডলফিনদেরকে এভাবে আটকে রাখাটা এক ধরণের Animal Abuse। এছাড়া, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পুলের বদ্ধ স্থানে থাকা ডলফিনগুলোর আয়ুষ্কাল মুক্ত পরিবেশে থাকা ডলফিনগুলোর গড় আয়ু থেকে কম হয়। অনেক বিজ্ঞানীও দাবি করেছেন যে, ডলফিনদের মত বুদ্ধিমান প্রাণীদের ডলফিনেরিয়ামে কয়েদী করে রাখা ঠিক নয়। যার ফলে বিভিন্ন দেশে ডলফিন পোষ মানানোর উপর কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ডলফিনদেরকে বন্দি করে রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।