বৈচিত্র্যময় কিছু জনগোষ্ঠীর কথাঃ স্লাভ

আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো স্লাভ জনগোষ্ঠী সম্পর্কে।

ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী হচ্ছে স্লাভ। মধ্য ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, উত্তর ও মধ্য এশিয়াজুড়ে এদের বিচরণ। স্লাভরা ইন্দো-ইউরোপীয় স্লাভিক ভাষায় কথা বলে এবং এদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মোটামুটি একই। বর্তমানে ইউরোপের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে এই স্লাভিক ভাষা ব্যবহারকারী স্লাভ জনগোষ্ঠী বিচরণ করে বেড়াচ্ছে।

তবে অবস্থানের ভিত্তিতে বিশাল এই স্লাভ জনগোষ্ঠী আরও কিছু জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পশ্চিম স্লাভ, পূর্ব স্লাভদক্ষিণ স্লাভ

এশিয়া ও ইউরোপ মিলিয়ে প্রায় ৩৬ কোটি স্লাভ জনসংখ্যা রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস করে রাশিয়াতে (১৩ কোটি)। এছাড়া ইউক্রেনে প্রায় ৬ কোটি, সার্বিয়ায় ১ কোটির বেশি, স্লোভাকিয়ায় ৫ লাখের মতো স্লাভ বাস করে। পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, বেলারুশ, চেক রিপাবলিক, ক্রোয়েশিয়া, ম্যাসিডোনিয়া, বসনিয়া, স্লোভেনিয়া এসব দেশেও উল্লেখযোগ্য স্লাভ জনগোষ্ঠী বাস করে।

Bishop Absalon
ছবি : সংগৃহীত

স্লাভদের ইতিহাস সর্বপ্রথম জানা যায় ৬ষ্ঠ শতকে। সেসময়কার স্লাভরা ছিল পৌত্তলিক। ৭ম শতাব্দীর পর থেকে তারা খ্রিষ্টান হতে শুরু করে। পূর্ব ও দক্ষিণ স্লাভরা সনাতন খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের স্লাভরা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। আর এই ধর্মবিভেদ শুরু হয় ১১ শতকের পর থেকে। এছাড়াও অল্প কিছু স্লাভ রয়েছে যারা প্রোটেস্টান্ট খ্রিষ্টান, মুসলিম ও নাস্তিক।

বড় ৩টি স্লাভ জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির খুঁজে পাওয়া যায় ব্রোঞ্জ ও প্রস্তর যুগের সময় থেকে। তবে বিভিন্ন কারণে এখন এদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে অল্পবিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। যেমনঃ পশ্চিম স্লাভদের সংস্কৃতির সাথে জার্মান ও বাল্ট সংস্কৃতির মিল রয়েছে। রোমান সাম্রাজ্য ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রভাবও দেখা যায় এদের উপর। পূর্ব স্লাভদের সংস্কৃতির সাথে ইরানি, খাজার ও ভাইকিংদের মিল পাওয়া যায়। এদের উপর প্রভাব ছিল বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ও পূর্ব ক্যাথলিক চার্চের। অন্যদিকে দক্ষিণ স্লাভ হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন স্লাভ জনগোষ্ঠী যাদের সংস্কৃতির সাথে মিল রয়েছে রোমান ও সেল্টিক জনগোষ্ঠীর। বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য, সনাতন খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের প্রভাব রয়েছে এদের উপর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন