আমাদের দেশে খুব বেশি দেখা না গেলেও বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে রাস্তায় মাঝে মাঝে দেখা যায় কিছু লোক রঙচংয়ে পোশাক পরিধান করে খেলা দেখাচ্ছে। তাদের হাতে একাধিক বল বা অন্য কিছু আছে যা তারা উপরে নিক্ষেপ করে তা আবার ছন্দের সাথে ধরে ফেলছে। একই সাথে একাধিক বস্তু ক্রমাগত শূন্যে ছুঁড়ে দেওয়া এবং সেই সাথে সেগুলো লুফে নেওয়ার যে খেলা সেটিই কেতাবী ভাষায় Juggling নামে পরিচিত। বল বা নির্দিষ্ট বস্তু উপরে নিক্ষেপ করে আবার নির্দিষ্ট সময় পরপর ধরার এই ছন্দময় কৌশল যারা দেখিয়ে থাকেন তাদেরকে বলা হয় Juggler।
জাগলিং খেলার উৎপত্তি কবে থেকে তা জানা না গেলেও এই খেলা যে হাজারো বছর আগেও ছিল তার প্রমান পাওয়া গেছে। মিশরের এক রাজা বেনি হাসানের সমাধিস্থলে জাগলিং করার ছবি খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই ছবিটি খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১৫০০ সালে আঁকা হয়েছিল। ১৭৬৮ সালে প্রথম সার্কাসে জাগলাররা বিনোদনমূলক এই খেলা দেখাতে শুরু করে।
জাগলিং খেলার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার হলো এর মনোমুগ্ধকর ছন্দ। জাগলাররা যেসব জিনিস নিক্ষেপ করে খেলা দেখায় তাদেরকে বলা হয় প্রপস। প্রপস হিসাবে বল, ক্লাব, রিংসহ অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। জাগলাররা একাধিক প্রপস উপরে নিক্ষেপ করে আর নির্দিষ্ট ছন্দে প্রতিটি বল ধরে ফেলে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি বলও মাটিতে পড়তে দেয় না জাগলাররা। এই নির্দিষ্ট ছন্দের মাঝেও খুঁজে পাওয়া যায় গণিতের ধারা ও প্যাটার্ন।
বাস্তবে আমাদের আশেপাশের সব কিছুতেই গণিতের রূপ পাওয়া যায়, তবে জাগলিংয়ের মতো কলাকৌশলে যেখানে সুনির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে, সেখানে গণিতের সৌন্দর্যটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।
জাগলিং খেলার অন্যতম নিয়ম হলো, জাগলারের হাতে একবারে বড়জোর একটি বলই নিক্ষেপ করবে আর অন্য হাত দিয়ে সে বলটি ধরবে। এই নিয়ম থেকেই জাগলিংয়ের গাণিতিক রূপ নির্ণয় করা যায়। ৩টি বল নিয়ে সাইটসোয়াপ প্যাটার্নে জাগলিং করা হয় তখন একটি নির্দিষ্ট বল যখন এক হাতে থাকে তখন অপর হাতে আরেকটি বল থাকে আর তৃতীয় বলটি থাকে বাতাসে। তৃতীয় বলটি নিচের দিকে পড়তে থাকলে সেই সময় হাতের একটি বল উপরে নিক্ষেপ করে দিয়ে তৃতীয় বলটি ধরতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি বল শুন্য থেকে হাতের মাঝে আসতে আসতে অপর একটি বল শুন্যে উঠবে। এই ধারাকে বলা হয় ৩, ৩, ৩, ৩, ৩… বা সংক্ষেপে শুধু ৩। আবার ৩টি বল যদি বৃত্তাকারে ছোঁড়া হয় তাহলে তার ধারা হবে ৫, ১, ৫, ১, ৫… বা সংক্ষেপে ৫, ১ । কিন্তু কোন একটি ধারা দেওয়া থাকলে আমরা কিভাবে বুঝবো যে সেটা জাগলিং ধারা কিনা? সেটা নির্ণয় করার জন্য মনে রাখতে হবে জাগলিংয়ের সেই নিয়মটি – একটি হাতে বড়জোর একটি প্রপসই থাকতে পারবে।
যেমন ৫০১ ধারাটির কথা চিন্তা করা যাক। এখানে ৫ দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে এই ধাপে ছোঁড়া বলটি আরো ৫ ধাপ পরে ক্যাচ করা হবে। ০ দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে এই ধাপে কোন বল ধরা হবে না। এই ধারার একটি ছবি আঁকা হলে তা হবে এরকম –
একটি ধারা দেখে সেই ধারার জন্য কতগুলো বল বা প্রপসের প্রয়োজন তাও বলে দেওয়া যায়। যেমন- ৪৪১৩ একটি জাগলিং ধারা এবং এটির জন্য মোট ৩টি বল লাগবে। বলের সংখ্যা নির্ণয় করার জন্য প্রতিটা সংখ্যার যোগফলকে মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিতে হবে। ৪৪১৩ এর প্রতিটা সংখ্যার যোগফল হলো –(৪+৪+১+৩) ১২ আর এখানে মোট আছে ৪টি সংখ্যা। তাই এই ধারাটির জন্য লাগবে – ১২/৪ বা ৩টি বল। জাগলিংয়ে গণিতের প্রভাব নিয়ে পুরো একটি বই লিখেছেন Burkard Polster। তার বইয়ের নাম The Mathematics of Juggling।