অণুর ছোটাছুটি !

ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা। বাসা থেকে অনেক দূরে হলেও দেখা যায় ময়লার দুর্গন্ধ বাসা পর্যন্ত কিভাবে জানি চলে আসে ! আবার, দরজা জানালা বন্ধ কোনো এসি রুমে যদি আমরা ডিম জাতীয় কোনো খাবার খেলে তাহলে দেখা যায় কিছুক্ষন পরে ডিমের গন্ধ পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়ে। কিংবা আমরা যদি বডি স্প্রে বা পারফিউমের বোতলের মুখ খুলে রাখি তাহলে দেখা যায় একটু পরে ধীরে ধীরে পুরো রুমে এর সুগন্ধটি ছড়িয়ে পড়ে। 

উপরের ঘটনাগুলোর কারণ কি হতে পারে ?? মূল কারণটি হচ্ছে ব্যাপন যাকে ইংরেজীতে বলা হয়ে থাকে Diffusion । 

ব্যাপন

ব্যাপন হচ্ছে সেই পদ্ধতি যার মাধ্যমে বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে কোনো পদার্থের অণুগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া। ব্যাপন অর্থ হলো সবদিকে ছড়িয়ে পড়া বা সর্বত্র বিস্তার লাভ করা। যে ভৌত প্রক্রিয়ায় একই তাপমাত্রা ও অভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনো পদার্থের অধিকতর ঘনস্থান থেকে কম ঘনস্থানের দিকে বিস্তার লাভ প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি রাস্তায় কেউ সুগন্ধি লাগিয়ে হেঁটে যাবার সময় অন্য পথচারীরাও সে সুগন্ধ অনুভব করতে পারে। এখানে গ্যাস থেকে গ্যাসের মধ্যে ব্যাপন ঘটে।

ব্যাপন প্রক্রিয়াঃ

  1. তরল ও কঠিনের মধ্যে ( পানি ও চিনির মিশ্রণ )                                           
  2. গ্যাস ও কঠিনের মধ্যে ( বায়ুতে কর্পুর দানার মিশ্রণ )
  3. তরল ও তরলের মধ্যে ( পানির সাথে কোনো রঙের মিশ্রণ )
  4. গ্যাস ও গ্যাসের মধ্যে ( বায়ুতে যে কোনো রকমের সুগন্ধীর মিশ্রণ)

অনেক সময় ঘরে আমরা আগরবাতি জ্বালাই। আগরবাতি জ্বালানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় পুরো ঘরে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। আবার, এক গ্লাস পানিতে এক চামচ চিনি ঢেলে দিলে চিনির অণুগুলো ধীরে ধীরে গ্লাসের সবটুকু পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। এবং পানির স্বাদ পরিবর্তন করে দেয়।  ব্যাপনের আরেকটি ভালো উদাহরন এটি।

ব্যাপনের প্রভাবকঃ

  • তাপমাত্রা – তাপমাত্রা বাড়লে সাধারণত ব্যাপন হার বাড়ে
  • পদার্থের অণুর ঘনত্ব- যে পদার্থের ব্যাপন ঘটবে সে পদার্থের অণুর ঘনত্ব বেশি থাকলে ব্যাপন হার বেশি হবে এবং অণুর ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার কম হবে 
  • মাধ্যমের ঘনত্ব – যে মাধ্যমে ব্যাপন ঘটবে সে মাধ্যমের ঘনত্ব বেশি বলে ব্যাপন হার কম হবে; মাধ্যমের ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার বেশি হবে
  • বায়ুচাপ – বায়ুর চাপ বাড়লে ব্যাপন হার কমবে, বায়ুর চাপ কম হলে ব্যাপন হার বাড়বে 
  • বস্তুর আকার ও ভর – বস্তুর আকার ও ভর যত কম হবে তত ব্যাপনের হার বেশী হবে 
  • ব্যাপন চাপ – ব্যাপনের চাপ যত বেশী হবে তত অণুর মধ্যে সংঘর্ষ বেশী হবে। এর ফলে ব্যাপনের হারও বেড়ে যাবে 
  •  ঘনত্বের তারতম্য – ঘনত্বের তারতম্য যত বেশি হয় তত তাড়াতাড়ি কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে 

ব্যাপন কেনো হয় : 

ব্যাপন হবার মূল কারণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে ও মাধ্যমে তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের বিনিময় সচল রাখা। 

স্বাভাবিকভাবে, যদি দুই মাধ্যমের ঘনত্ব একই রকম থাকে তাহলে তখন সেখানে ব্যাপন হয় না। সাধারণত একই সময়ে এবং একই স্থানে পরিবেশের তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলের চাপ সমান থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাপন পদার্থের ঘনত্ব এবং মাধ্যমের ঘনত্বই ব্যাপন নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক হয়ে দাঁড়ায়। মাধ্যম ও ব্যাপন পদার্থ ( যেমন-বেলুন ভর্তি বাতাস এবং চারপাশের বাতাস ) যদি একই হয় তাহলে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপন ঘটবে যতক্ষণ পর্যন্ত দুটোর ঘনত্ব সমান না হয়।

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন