ওয়ার্ল্ড প্রিম্যাচিউরিটি ডে : সচেতনতা শুরু হোক ব্যক্তিপর্যায়ে

সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন দিবসের সংযোজন ঘটছে। এরকমই একটি দিন হল 'ওয়ার্ল্ড প্রিম্যাচিউরিটি ডে'। প্রতি বছর নভেম্বরের ১৭ তারিখে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। দিবসটির শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে।

সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান প্যারেন্ট অর্গানাইজেশন্স নভেম্বরের ১৭ তারিখকে পালন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ারনেস ডে ফর

প্রিটার্ম বার্থ’ হিসেবে। পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে দিবসটি ওয়ার্ল্ড প্রিম্যাচিউরিটি ডে নামে পালিত হয়ে আসছে।
২০১৩ সালের এ দিনে দিবসটি পালিত হয়েছিল পৃথিবীর ৬০ টি দেশে একসাথে।

নিউমোনিয়ার পর পৃথিবীজুড়ে নবজাতক-মৃত্যুর অত্যন্তবৃহৎ একটি কারণ হল এই প্রিম্যাচিউর বার্থ অর্থ্যাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশুর জন্ম। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদ্যজাতেরই মৃত্যু ঘটে সময়ের পূর্বে জন্ম নেয়ার ফলে।

বর্তমানে প্রতি ১০ জনে ১ জন শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেয়। আমাদের দেশে প্রতি ১০০ শিশুর ১৪ জনই হয় প্রি ম্যাচিউরড। আর এভাবে প্রতিবছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রিম্যাচিউরড বেবির জন্ম হয় সারাবিশ্বে। দেশে এ সংখ্যা প্রতিবছরে প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার।

উল্লেখ্য, মাতৃগর্ভ থেকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার অন্তর্বর্তীকাল থাকে সাধারণত ৩৭ সপ্তাহ বা ২৫৯ দিন। এ সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার আগেই শিশু জন্ম নেয়ার ঘটনাকেই বলে প্রি-টার্ম বার্থ বা প্রি-ম্যাচিউর বার্থ।

গর্ভফুল নিচে থাকা, জরায়ুর ত্রুটি, গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত রক্তচাপ, মায়ের কিডনি বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, মূত্রনালির সংক্রমণ বা অন্যান্য সংক্রমণ, জরায়ুতে পানি বেশি থাকা বা আঘাত পাওয়া, সময়ের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া, মায়ের ধূমপান বা তামাক খাওয়া, মায়ের অপুষ্টি বা অল্প বয়সে গর্ভধারণ, ঘন ঘন সন্তানের জন্ম দেওয়া-এগুলোই সাধারণত প্রিটার্ম বার্থের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।

সময়ের আগে জন্ম নেওয়া এসব নবজাতকের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিপক্ব থাকে বলে জন্মের পর পরই তারা মৃত্যুবরণ করে অথবা বিভিন্ন সমস্যা বা রোগে দ্রুতআক্রান্ত হয়।

বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক তাহমীনা বেগমের মতে, উচ্চপ্রযুক্তির স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই এই শিশুদের শতকরা ৭৫ ভাগকে বাঁচানো সম্ভব।

আর এক্ষেত্রে, শিশুকে পরিষ্কার ও গরম রাখা, নিয়মিত মাতৃদুধ পান করানো, শ্বাসকষ্ট থাকলে জরুরিভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করা, প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো, জরুরিভাবে জীবাণু সংক্রমণ শনাক্ত করা এবং যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধপ্রদান করা- এ সবকিছুর উপর দিতে হবে বাড়তি নজর। এছাড়া গর্ভকালীন মাকে স্টেরয়েড-জাতীয় ইনজেকশন দেওয়া হলে,  তা জন্মের পর প্রিম্যাচিউরড শিশুর শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

তাছাড়া ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ পদ্ধতি প্রয়োগ করেও প্রিম্যাচিউরড নবজাতকের মৃত্যুর হার রোধ করার সম্ভাবনা তৈরি করা যেতে পারে। ক্যাঙারু মাদার কেয়ার হল শিশুকে মায়ের বুকের উষ্ণতায় রেখে একই কাপড় দিয়ে মা ও শিশুকে ঢেকে রাখা। এতে শিশুর শরীর উষ্ণ থাকে এবং প্রয়োজনে শিশু মায়ের দুধ খেতে পারে।

এরকমই ছোটখাটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় আছে যার মাধ্যমে সময়ের পূর্বেই শিশুর জন্ম এবং প্রিম্যাচিউরড বেবির মৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা যায়। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ও অজ্ঞানতার দরুন সারা বিশ্বের লাখো শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে পৃথিবীর আলো ভালভাবে দেখার আগেই।  

আর তাই এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্যই পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে থেকে বিভিন্ন অভিভাবক সংগঠন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সংগঠন, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন উদযাপন করা শুরু করেছে বিশ্ব প্রিম্যাচিউরিটি দিবস। নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে দিবসটি উপলক্ষে।

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, আঞ্চলিক এমনকি স্থানীয় পর্যায়েও শুরু থেকেই হয়ে আসছে সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানা কার্যক্রম। তাই এসব সংগঠনের উদ্দেশ্য সফল করতেই হোক বা একটি সুন্দর জাতি গড়ার জন্যই হোক অথবা একান্তই নিজের পরিবারের স্বার্থেই হোক-সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ শুরু করতে হবে ব্যক্তিপর্যায় থেকেই।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন