এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে বিমানভ্রমণের বিকল্প নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করা যায় বিমানের সাহায্যে। যারা ঘন ঘন এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করেন, তাঁরাই জানেন বিমানের প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু সময় বাঁচানোর সাথে সাথে বিমানভ্রমণের কিছু অসুবিধাও আছে। যারা অহরহই ভ্রমণ করেন, তাঁদের কাছে জেট ল্যাগ (Jet Lag) একটি পরিচিত নাম। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বা খুব দূরের কোন দেশে যাতায়াত করলে এই অসুবিধা দেখা দেয়।
বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার সময় ব্যবধান ১০ ঘন্টা। অর্থাৎ, এখানে যখন দিন, তখন আমেরিকাতে রাত। আমাদের শরীরেও একটা ঘড়ি যুক্ত করা আছে। যে ঘড়ি আমাদের বিশ্রাম, কাজ করার সাথে সামঞ্জস্যতা স্থাপন করে। আমরা সবসময় দিনে কাজ করে আর রাতে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। আমাদের শরীরের ঘড়িও সেভাবেই কাজ করে। যখন রাত হয়, তখন এমনিতেই আমাদের ঘুম এসে যায়, আবার সকাল হলেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। একজন বাংলাদেশী যদি হঠাৎ করে আমেরিকা যান, তাহলে নিয়ম অনুসারে তাঁর রাতে ঘুমাতে হবে এবং দিনে জেগে থাকতে হবে। কিন্তু তাঁর শরীরের ঘড়ি তো বাংলাদেশের হিসেবে চলছে। যে কারণে বাংলাদেশের সময় অনুসারেই তাঁর ঘুম আসবে। সুতরাং আমেরিকাতে যখন দিন, তখন তিনি ঘুমাতে যাবেন এবং যখন রাত, তখন জেগে উঠবেন। বিমান ভ্রমণের ফলে শরীরের এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটাকেই জেট ল্যাগ বলে। জেট বিমানে ভ্রমণের ফলে এটা দেখা দেয় বলে এর নাম জেট ল্যাগ।
দীর্ঘ ভ্রমণে টাইম জোন হঠাৎ করেই পরিবর্তিত হয়ে যায় বলেই জেট ল্যাগ দেখা দেয়। এর ফলে শুধু ঘুম না, আরও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। টাইম জোন বদলানোর ফলে শারীরিক কার্যক্রমের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে ঘুমের পাশাপাশি ক্ষুধা, হরমোন নিঃসরণ প্রভৃতি ব্যাপারগুলো অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এছাড়াও মাথাব্যথা, বিরক্তি, বমি বমি ভাব দেখা দেয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আসলে হঠাৎ করে টাইম জোন পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্ক নতুন রুটিনে মানিয়ে নিতে একটু সময় নেয়। জেট ল্যাগের ফলে মূলত ঘুমেরই সবচেয়ে বেশী ব্যাঘাত ঘটে। কেউ হয়তো দিনের বেলা ঘুমিয়ে পড়ে, আবার কেউ হয়তো মধ্য রাতে জেগে উঠে বসে থাকে। জেট ল্যাগ কাটাতে কারও হয়তো একদিন লাগে, আবার কারও হয়তো কয়েকদিন লেগে যায়।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেন যে জেট ল্যাগ শুধু শরীরের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় তা না, এটি মস্তিষ্কেও বেশ চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, এবং মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও ডায়াবেটিক সমস্যা বৃদ্ধি, হার্টের সমস্যা, এবং উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য জেট ল্যাগ প্রায়ই বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন ভ্রমণের পর বিশ্রাম নেবার। দূরপাল্লার বিমান ভ্রমণের পর পুরো একদিন বিশ্রাম নিলে জেট ল্যাগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যারা রাতে কাজ করে অভ্যস্ত, তাঁদের শরীর এমনিতেই স্বাভাবিক ঘড়ি অনুসারে কাজ করতে পারে না। জেট ল্যাগ তাঁদের জন্য আরও বেশী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পুরো একদিন আলোবিহীন ঘরে ঘুমিয়ে তাঁরা জেট ল্যাগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।