বিজ্ঞান নিয়ে অনেকের মনেই ভয়ভীতি থাকে। জটিল সব সূত্র, গাণিতিক ব্যাখ্যা আর কাঠখোট্টা সব শব্দ শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। জটিল সব ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে সহজভাবে তুলে ধরার কাজটিই করছে ‘সায়েন্স রকস’ টিভি অনুষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে ২টি করে ৫২ সপ্তাহে মোট ১০৪টি মজার মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হবে তোমাদের আর বলে দেয়া হবে সেটা কেন হলো, কিভাবে হলো। আজ এক ঝলকে জেনে নেয়া যাক সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানের পঞ্চম পর্বে দেখানো ‘Flaming candle seesaw’ বা জ্বলন্ত মোমবাতির ঢেঁকিকল পরীক্ষাটি।
মোমবাতিঃ জন্মদিনে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে আমরা জন্মদিন উৎযাপন করি। আর অন্ধকারে আলো দেওয়ার কাজ তো সে করেই যাচ্ছে। এখন আমি যদি বলি মোমবাতির ঢেঁকি বানাবো তাহলে নিশ্চয়ই অবাক করার মত ব্যাপার হবে! চলো তাহলে দেখা যাক কিভাবে সেটা সম্ভব।
কি কি লাগবেঃ
প্রতিবারের মতো এবারও বলছি আমাদের এক্সপেরিমেন্টের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো আমাদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায় এমন সব উপকরণ। আমাদের লাগবে দুটি কাঁচের গ্লাস, একটি লম্বা সূচ, একটি হালকা মোটা মোমবাতি, একটি চাকু এবং একটি দিয়াশলাই। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি উপকরণগুলো একটু বিপদজনক। তাই আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে ও প্রয়োজনে বড়দের সাহায্য নিতে হবে।
কিভাবে করবোঃ
প্রথমে মোমটিকে নিয়ে এর নিচের অংশটি সামান্য কেটে ফেলতে হবে যেন মোমের সুতাটি বের হয়ে যায়। কাটা হয়ে গেলে এবার লম্বা সূচটিকে আগুন দিয়ে গরম করে নিই এবং তারপর এই সূচকে মোমটার ঠিক মাঝখানে দিয়ে ঢুকিয়ে দেই। লক্ষ্য রাখবো যেন সূচটা মোমটার দুই প্রান্তে একই দূরত্ব বজায় রাখে। সূচ ঢুকানো হয়ে গেলে মোমসহ সূচের প্রান্ত দুইটিকে দুইটি ভিন্ন গ্লাসের উপর রেখে দেই। দেখা যাবে মোমটির যেকোনো এক প্রান্ত মাটির দিকে হেলে আছে এবং অন্য প্রান্তটি উপরের দিকে উঠে আছে। এবার মোমের যে প্রান্তটি মাটির দিকে হেলে আছে সেই প্রান্তের সুতাতে আগুন ধরিয়ে দেই। যতক্ষণ না পর্যন্ত দুইটি প্রান্ত ব্যালান্স বা সমান হয় অর্থাৎ দুইটি প্রান্তই শূন্যে দুলতে থাকবে। একটি প্রান্ত আস্তে করে শূন্যে উঠতে লাগলে আরেক প্রান্তের সুতাতেও সাথে সাথে আগুন ধরিয়ে দেই। এখন মোমের দুইটি প্রান্ত থেকেই মোম গলে গলে পড়তে থাকবে এবং মোমটা সূচের সাহায্যে গ্লাসের দুই প্রান্তের উপর ভর দিয়ে দুলতে থাকবে। এখন এই মোমটা দেখতে অনেকটা ঢেঁকি কলের মত মনে হবে । আমরা গ্রামের বাড়িতে ধান ভানতে আগে যে ঢেঁকি ব্যবহার করতাম ঠিক সেই ঢেঁকির মত।
কেন হলোঃ
মোমের যে প্রান্তটি প্রথমে মাটির সাথে লেগে থাকে সেই প্রান্তের ওজন অন্য প্রান্তের থেকে বেশি থাকে তাই সেই প্রান্তটি মাটির সাথে লেগে থাকে। যখন আমরা সেই প্রান্তে আগুন দিয়ে দেই তখন মোম গলে পড়ে যেতে থাকে এবং ঐ প্রান্তটি হালকা হয়ে যায়। ফলে প্রান্তটি আস্তে আস্তে সূচের সাহায্যে গ্লাসের উপর ভর দিয়ে শূন্যে উঠে যায়। আবার ঠিক এই সময়ে অন্য প্রান্তে আগুন দিয়ে দিলে মোমটি দুলতে শুরু করে। কারন তখন দুই পাশ থেকেই মোমের গলিত ফোঁটা পড়ে যেতে থাকে। এই মুহূর্তে মোমের দুই প্রান্তের মধ্যে ব্যালান্স ইন এবং ব্যালান্স আউট এর খেলা চলতে থাকে। ঠিক তখনি আমরা মোমটিকে দুলতে দেখি।