ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু। নামটা অনেক বেশি আজব। এই নামের পেছনের ইতিহাস কারও বা জানা আছে বা নেই। কিন্তু এই খেলার যে আনন্দ, তা কমবেশি সবারই জানা আছে। হা-ডু-ডু ও কাবাডি খেলার মধ্যে নামের পার্থক্য থাকলেও নিয়মের পার্থক্য নেই। মূলত কাবাডি খেলাটি বাংলার গ্রামগঞ্জে হা-ডু-ডু খেলা নামেই বেশী পরিচিত।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। পূর্বে কেবল মাত্র গ্রামে এই কাবাডি খেলার প্রচলন দেখা গেলেও বর্তমানে সব জায়গায় কাবাডি খেলা প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা কিভাবে পরিপূর্ন শুদ্ধভাবে এই খেলা খেলতে হয়।
চলো দেখে নেই কিছু নিয়মঃ
১. ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে লম্বায় ১২.৫ মিটার ও চওড়ায় ১০ মিটার মাপের মাঠে কাবাডি খেলা হয়। এর মধ্যে ৭ জন খেলোয়াড় মাঠে থাকে আর বাকি ৫ জন থাকবে মাঠের বাইরে।
২. প্রতিপক্ষের সীমানাতে প্রবেশ করে এক নিশ্বাসে যতজন সম্ভব প্রতিপক্ষকে ছুঁয়ে, তাদের সাথে শক্তিমত্তার পরীক্ষা দিয়ে নিজ সীমানায় ফিরে আসাই প্রতিটি খেলোয়াড়ের মূল লক্ষ্য।
৩. Raider হচ্ছে যে খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের সীমানায় হানা দিবে। আর এক নিশ্বাসে আছে কি না, এটা পরীক্ষার জন্যে একটানা স্পষ্ট ভাবে পুণঃপুণঃ কাবাডি বলে যেতে হয় তাকে। উপরের ছবিতে সবুজ জার্সি পরিহিত খেলোয়াড়টিকে Raider বলা হয়।
৪. ২০ মিনিট করে দুই অর্ধে ৪০ মিনিট খেলা হয়।
৫. মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে (একাধিক হতে পারে) স্পর্শ করে এক নিঃশাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদেরকে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয়জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
৬. এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা (অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে।
৭. কোন আক্রমণকারী বা রেইডার বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী বা রেইডার আউট বলে গণ্য হবে।
৭. ৪০ মিনিট পর যার পয়েন্ট বেশি হবে সে-ই বিজয়ী হবে। তবে পয়েন্ট সমান থাকলে আরো ৫ মিনিট খেলা চলে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে, তাহলে যে দল আগে পয়েন্ট পেয়েছে, তাঁরা বিজয়ী হবে।
৮. সাধারণত, কাবাডি খেলায় ৬ জন ম্যাচ অফিশিয়ালের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। একজন রেফারি, দুইজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার ও দুইজন সহকারী স্কোরার।
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের চেয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই খেলার প্রচলন অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম পেশাদার কাবাডি লীগ “প্রো কাবাডি” এর মাধ্যমে ভারতে ব্যাপক আকারে কাবাডির চাহিদা বেড়েছে।
ক্রিকেটের আইপিএল, ফুটবলের আইএসএল এর আদলে ভারতের ক্রীড়া আসরের নতুন সংযোজন এই প্রো কাবাডি টুর্নামেন্ট। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বলিউডের বড় বড় তারকারা কিনে নিয়েছেন টুর্নামেন্টের দলগুলোকে।
ক্রিকেটের দেশ ভারতে আজ কাবাডির জনপ্রিয়তাও আকাশচুম্বী। টেলিভিশন স্পন্সর কিংবা লোকাল স্পন্সর, সবদিক দিয়ে সমান জনপ্রিয় এখন এই খেলাটি। ২০১৫ প্রো কাবাডি টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পন্সর ছিল স্টার স্পোর্টস। এছাড়া, টুর্নামেন্টের স্পন্সরের তালিকায় রয়েছে TVS, BAJAJ, MAHENDRA JEETO এর মতো বড় বড় নাম।
অমিতাভ বচ্চনের গলায় ২০১৫ আসরের থিম সং “ লে পাঙ্গা ”, কিংবা ঐশ্বরিয়া রায়, আমির খান, অভিষেক বচ্চনের মত বড় বড় তারকারাও গলা ফাটিয়েছেন নিজ নিজ দলের সমর্থনে।
গত ২৩ই আগস্ট,২০১৫ তারিখে প্রো-কাবাডি সিজন-২ এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে মুম্বাইয়ের দল “ U Mumba ” বেঙ্গালুরু বুলসকে ৩৬-৩০ পয়েন্টে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিজন-১ এর চ্যাম্পিয়ন দল ছিল অভিষেক বচ্চনের Jaipur Pink Panthers যারা এবার পঞ্চম স্থান দখল করে।
অবাক করা বিষয় এটিই যে, ভারতে ক্রিকেটের পর সবচেয়ে রেটিং প্রাপ্ত খেলা এখন কাবাডি। এক বছরের মাথায় এই সাফল্য ভারতের অন্যান্য ক্রীড়াঙ্গনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিচ্ছে বীরদর্পে।
এত এত দর্শকপ্রিয়তার কারণও আছে। ১৯৯০ সালে এশিয়ান গেমসে কাবাডির অন্তর্ভুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবারেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ভারতের পর সবচেয়ে সফল দল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এই পর্যন্ত তিনবার এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক জিতেছে কাবাডিতে ( ১৯৯০,১৯৯৪ ও ২০০২ সালে)
বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের অধিনায়ক জিয়াউর রহমান খেলেছেন প্রো-কাবাডি সিজন-১ এ।
বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, ইরান, চীন, জাপান, নেপাল, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে কাবাডি খেলার প্রচলন রয়েছে।
প্রাচীন এই খেলাটি আবার হয়তো এর আগের চেহারায় ফিরে আসবে, যদি ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলো একইভাবে এই খেলার প্রচার এবং প্রসারের হাল ধরেন।