ইউরোপের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী এবং ইতিহাস বদলে দেয়ার মত ঘটনা ছিল ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলিউশন বা ফরাসি বিপ্লব। ১৭৮৯ সালে শুরু হয়ে এ বিপ্লব শেষ হয় ১৭৯০ সালের শেষ দিকে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থানের সাথে সাথে। আর এই সময়ের মধ্যে ফ্রান্সের নাগরিকরা তাদের দেশে বহুবছর ধরে চলা রাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্রের সূচনা ঘটায়।
১৮শ শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। খরা, ফসলের ক্ষতি আর গবাদি পশুর রোগের কারণে মানুষ চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে থাকে। তার উপর আমেরিকান বিপ্লবে ফ্রান্সের বিপুল পরিমাণ অর্থায়নের কারণে রাজকোষেও অর্থ সংকট দেখা দেয়। সেই সাথে রাজা ষোড়শ লুইয়ের জনগণের উপর অবিচার ও অত্যাচারে সবাই অতিষ্ট হয়ে পড়ে।
ফরাসি বিপ্লবের মূলনীতি ছিল “Liberté, égalité, fraternité, ou la mort!” অর্থাৎ “স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব অথবা মৃত্যু”। এই শ্লোগানটিই বিপ্লবের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলো যার মাধ্যমে সামরিক এবং অহিংস উভয় পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শ্লোগানটি তখন সকল কর্মীর প্রাণের কথায় পরিণত হয়েছিলো।
১৭৮৯ সালের মে মাসে এস্টেট-জেনারেল কনভোকেশনের সময়েই ফরাসি বিপ্লবের সূচনা ঘটে। বিপ্লবের প্রথম বছরে জুন মাসে থার্ড এস্টেটের সদস্যরা টেনিস কোর্ট ওথ নামে একটি প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে, ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে, আগস্ট মাসে Declaration of the Rights of Man and of the Citizen পাস হয় এবং ভার্সাই নগরী অভিমুখে মার্চ হয়। আগস্ট ১৯৭৯ সালে সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে।
পরবর্তী কয়েকবছর ফ্রান্স অনেক রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। দেশটিতে গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সূচনা ঘটে, বিবাহ বিচ্ছেদের আইন, ইহুদি ও কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয় এবং তার পরের বছর জানুয়ারিতে রাজা ষোড়শ লুইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।