মধ্য আফ্রিকার অন্যতম আকর্ষণ ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতকে পৃথিবীর সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ের যৌথ নদী জাম্বেজি-তে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। জাম্বেজি নদী আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম নদী। জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ের সীমান্তে অবস্থান করে এটি দেশ দুটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। মূলত জাম্বিয়াতে অবস্থিত হলেও ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় জিম্বাবুয়ে থেকে।
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত উচ্চতায় ১০৮.৩ মিটার এবং প্রস্থে ১,৭০৩ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩৩,০০০ ঘনফুট পানি পতিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে। এটি পৃথিবীর একমাত্র জলপ্রপাত যার প্রশস্ততা ১ কিলোমিটারের অধিক এবং উচ্চতা ১০০ মিটারের উপরে। প্রশস্ততা এবং উচ্চতার জন্য ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতকে পৃথিবীর সবচাইতে বড় জলপ্রপাত হিসেবে মনে করা হয়।
জলপ্রপাতটি প্রচণ্ড গর্জনশীল। প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার দূর থেকে এর গর্জনধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। পানি পতিত হওয়ার সময় এর থেকে বাষ্প এবং ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়ার উচ্চতা প্রায় ৪০০ মিটার ছাড়িয়ে যায়। স্থানীয় চিতোঙ্গা অধিবাসীরা জলপ্রপাতটিকে ডাকে ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’ নামে। এর অর্থ ‘বজ্রের ধোঁয়া’। জলপ্রপাত থেকে সৃষ্ট গর্জন এবং ধোঁয়ার জন্যই এই অদ্ভুত নাম।
১৯ শতকের মাঝামাঝিতে খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে দেয়ার জন্য স্কটিশ মিশনারি ডেভিড লিভিংস্টোন আফ্রিকায় পৌঁছান। প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ১৮৫৫ সালে তিনি জলপ্রপাতটি আবিষ্কার করেন। রানী ভিক্টোরিয়া কে চিরস্মরণীয় করে রাখতে তিনি জলপ্রপাতটির নাম দেন ‘ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত’। ১৮৫৭ সালে লিভিংস্টোন তার ডায়েরীতে লেখেন,”ইংল্যান্ডের কেউ এই অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যকাব্য কল্পনাও করতে পারবে না। দেবদূতরা যখন এর আশেপাশে উড়ে, খুব সম্ভবত তারাও এই দৃশ্য দেখে চমৎকৃত হন।”
এই অঞ্চলের অধিবাসীদের কয়েকশো বছর ধরে জলপ্রপাতটি নিয়ে একধরণের ধর্মীয় ভীতি ছিল। এরা কখনো জলপ্রপাতের কাছাকাছি আসতো না। ১৯০৫ সালে বুলাওয়েতে রেলগাড়ি চলাচল শুরু হলে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত জনপ্রিয়তা পায়।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সাথে তুলনা করলে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত প্রায় দ্বিগুণ প্রশস্ত এবং দ্বিগুণ গভীর। ইউনেস্কো ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জলপ্রপাতটিকে তালিকাভূক্ত করে। এর পরবর্তী বছর প্রায় ৩ লক্ষ লোক জলপ্রপাতটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতে গেলে হতে পারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক অভিজ্ঞতা। এখানে মাঝে মাঝেই দেখা যায় ‘মুনবো’। মুনবো হচ্ছে এক ধরণের রেইনবো বা রংধনু। কিন্তু রেইনবো সূর্যের আলোতে তৈরি হলেও মুনবো সৃষ্টি হয় রাতের বেলা চাঁদের আলোতে। জলপ্রপাতের চারপাশে উড়তে থাকা পানির কণা আর চাঁদের আলো মিলে তৈরি করে এই মুনবো। কপাল ভালো থাকলে আপনারও এই মুনবো দেখার সৌভাগ্য হতে পারে।
২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ জলপ্রপাতের পুণরায় নামকরণ করে ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’।