মাটির নিচের টেক্টোনিক প্লেটগুলো নড়াচড়া করতে করতে যখন একটি আরেকটির সাথে ধাক্কা খায় তখনই ঘটে ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রার ওপর নির্ভর করে সেটির ভয়াবহতা।
এছাড়াও সে স্থানের মাটির গঠন, ঘরবাড়ির প্রকৃতি, ঘনবসতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
মাটির নিচে টেক্টোনিক প্লেটগুলো প্রায় সর্বদাই নড়াচড়া করতে থাকে এবং সেগুলোর ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা ৪ এর কম থাকে যা খুব একটা মারাত্মক নয়।
তবে রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রায় গেলে তা ভয়াবহ এবং ৭ বা ৮ মাত্রায় পৌঁছালে তা মারাত্মক ভয়াবহ ভূমিকম্পে রূপ নেয়। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ যা ১৯৬০ সালে হয়েছিল চিলিতে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি ভূমিকম্পের উল্লেখ করা হল এখানে।
১. ভালদিভিয়া, চিলি
এ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ৯.৫ মাত্রার। ১৯৬০ সালের ২২ মে চিলিতে আঘাত হানে এটি। ১ হাজার ৭০০ মানুষ এই ভূমিকম্পে মারা যায় এবং প্রায় ২০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এই ভূমিকম্পের ফলে।
২. গ্রেট আলাস্কা আর্থকোয়েক
১৯৬৪ সালের ২৮ মার্চের এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯.২। এর উচ্চমাত্রার কারণে এই ভূমিকম্পকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প বলা হয় যদিও এতে মারা গিয়েছিল ১৫০ জন।
৩. সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া
২০০৫ সালের মার্চ মাসে উত্তর সুমাত্রায় ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার মাত্র ৩ মাস আগে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ সুমাত্রায় আঘাত হানে মানব ইতিহাসের আরেকটি প্রলয়ঙ্কারি ভূমিকম্প। ৯.১ মাত্রার এই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ভয়াবহ সুনামির এবং এর ফলে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ মারা যায়। এই ভূমিকম্পের কিছুদিন পরেই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে একটি অগ্নুৎপাত ঘটে যা এই ভূমিকম্পের ফলেই ঘটেছে বলা ধারণা করা হয়।
৪. সেন্দাই, জাপান
২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানে আঘাত হানে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প। মাত্র কয়েক বছর আগে সংগঠিত এই ভূমিকম্পের কথা আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে কারণ এই ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল জাপানের একটি পারমাণবিক চুল্লী ও সমুদ্র উপকূলীয় একটি শহর ভেসে যায়। চুল্লীটি থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা। জাপানে ঘনঘন ভূমিকম্প হয় বলে তারা তাদের স্থাপনাগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করেই তৈরি করে। কিন্তু এই দুর্ঘটনা জাপানের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল এবং ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প এটি।
৫. কামচটকা, রাশিয়া
১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর সৃষ্টি হয় এই ৯ মাত্রার ভূমিকম্প। এর ফলে সৃষ্টি হয় ৮ মিটার উঁচু জলোচ্ছাস বা সুনামি। তবে সৌভাগ্যবশত এ ভূমিকম্পেও হতাহতের তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি যদিও আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ব্যাপক।
৬. বায়ো বায়ো, চিলি
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১০ সালে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৮। ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ চিলির ইতিহাসে অন্যতম এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনা ছিল এটি। একই সাথে সুনামির উৎপত্তি হওয়ায় মারা যায় প্রায় ৫০০ মানুষ এবং আহত হয় ১২ হাজারেরও বেশি।
৭. ইকুয়েডর উপকূলে
১৯০৬ সালের ২১ জানুয়ারি এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় যার মাত্রা ছিল ৮.৮। সেই সাথে সৃষ্টি হয় প্রলয়ংকারী সুনামির। এর ফলে কলম্বিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং মারা যায় ১ হাজার ৫০০ মানুষ। এরপর থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সুনামি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়।
৮. র্যাট আইল্যান্ড, আলাস্কা
৮.৭ মাত্রার এ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য আলাস্কায়। এই ভূমিকম্পের ফলেও বিশাল সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল যার কারণে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তবে জনমানবহীন অঞ্চলে হবার কারণে এই ভূমিকম্পে কোন প্রাণনাশ বা আহত হবার ঘটনা ঘটেনি।
৯. উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া
রিখটার স্কেলে ৮.৬ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে ২০০৫ সালের ২৮ মার্চ। তবে এই ভূমিকম্পের ভয়াবহতা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সুনামির কারণে। ভূমিকম্পস্থল সমুদ্রের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল সুনামি যার কারণে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু এবং ৪০০ মানুষ আহত হয়েছিল।
১০. আসাম তিব্বত ভূমিকম্প
১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট সৃষ্ট এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৬। এটির উৎপত্তিস্থল তিব্বতে হলেও ভয়াবহতা আসাম এবং চীনের কিছু অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এই ভূমিকম্পে।