যন্ত্রটির গোল্লা ভরাট ধরার কৌশল

একটা সময় ছিল, যখন বিভিন্ন পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের খাতা ভরে লিখেও লেখা শেষ হত না। এখন শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই পাল্টেছে, সেই সাথে পাল্টেছে পরীক্ষার ধরণও। এখন আর একটানা কয়েক ঘণ্টা যন্ত্রের মত কলম চালাতে হয় না। নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে বহুনির্বাচনী ধরণের প্রশ্ন। এ জাতীয় প্রশ্নে ৪টি উত্তর দেয়া থাকে, এবং তার মধ্যে একটি সঠিক উত্তর বেছে নিতে হয়। এ ধরণের প্রশ্নের সুবিধা হল যে খুব অল্প সময়ে শিক্ষার্থীর বৃহৎ পরিসরের জ্ঞানের পরীক্ষা নেয়া যায়। ৫টি বা ১০টি রচনামূলক প্রশ্নের বদলে ১০০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেওয়া হলে তা আরও ভালোভাবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু ৫০টি বা ১০০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মাঝে প্রতিটি শিক্ষার্থীর উত্তর সঠিক না ভুল তা খুঁজে বের করতে পরীক্ষককে বেশ বেগ পোহাতে হয়, এবং সময়ও লাগে অনেক বেশী। তাই সময় কমিয়ে আরও কম সময়ে ফল প্রকাশ করতে আবিস্কার হল ওএমআর মেশিন (OMR Machine)। ওএমআর মেশিনের পুরো নাম হল- অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (Optical Mark Recognition)। ওএমআর মেশিন দিয়ে বহুনির্বাচনী ধরণের প্রশ্নের উত্তরপত্র দেখতে বেশ কম সময় লাগে। এটা এমন একটা মেশিন যেটা কিনা স্ক্যানারের সাহায্যে যেকোনো কাগজে বিশেষ এক ধরণের দাগ পড়তে পারে এবং সেই অনুযায়ী ফল প্রকাশ করতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা একটু জটিল মনে হলে আসলে বেশ সহজ।

ওএমআর মেশিনে প্রবেশ করানোর জন্য এক ধরণের বিশেষ কাগজে পরীক্ষা নেওয়া হয়, একে ওএমআর শিট (OMR Sheet) বলে। এ ধরণের কাগজে ১,২,৩ এভাবে একটির নিচে আরেকটি প্রশ্নের নাম্বার দিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ক, খ, গ, ঘ, এই চারটি করে বৃত্ত থাকে। মূল প্রশ্নপত্র থেকে সঠিক উত্তর বেছে নিয়ে নাম্বার অনুযায়ী বৃত্ত ভরাট করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য একবারই বৃত্ত ভরাটের সুযোগ থাকে। কোন কারণে ভুল বৃত্ত ভরাট করে ফেললেও তা সংশোধনের কোন সুযোগ নেই। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সাবধানতা অবলম্বন করতে শেখে। 

এবার দেখা যাক এমন অদ্ভুত ধরণের বৃত্ত ভরাট করা কাগজটি দিয়ে ওএমআর মেশিন কি করে। একটি ওএমআর শিট মেশিনে প্রবেশ করানোর পর এতে থাকা স্ক্যানার দিয়ে যন্ত্রটি কাগজটিকে স্ক্যান করে। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য চারটি বৃত্ত থাকলেও পরীক্ষার্থীকে একটি বৃত্ত ভরাট করতে হবে।

কাগজটির ওপর ওএমআর মেশিন একধরণের আলোকরশ্মি ফেলে যার ফলে এটি ধরা পড়ে যায় যে চারটি খালি বৃত্তের মধ্যে কোনটি ভরাট করা হয়েছে। একটির বেশী বৃত্ত ভরাট করলে, বা বৃত্তটি পুরোপুরি ভরাট না করলে, এমনকি কালি বৃত্তের বেশী বাইরে গেলে ওএমআর মেশিন সেই উত্তরটি ভুল বলে ধরে নেয়। ওএমআর মেশিনে মুহূর্তের মধ্যে শত শত উত্তরপত্র দেখে ফল প্রকাশ করা যায়।

ওএমআর মেশিন ছাড়াও আজকাল কম্পিউটারের জন্য ওএমআর সফটওয়্যার পাওয়া যায় যা কম্পিউটারের মাধ্যমেই উত্তরপত্র দেখতে সাহায্য করে। সাধারণ ওএমআর মেশিন মাঝে মাঝে ফল নির্ধারণ করতে ভুল করে, বা সঠিকভাবে বৃত্ত ভরাট না হলে তা গণনা করতে পারে না। কিন্তু ওএমআর সফটওয়্যারে এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। তবুও আমাদের দেশে ওএমআর মেশিন যতটা জনপ্রিয়, ওএমআর সফটওয়্যার ততটা নয়। বর্তমানে ওএমআর মেশিনের ব্যবহার শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, সর্বত্র প্রচলিত হচ্ছে। আজকাল যেকোনো দাপ্তরিক তথ্য, জরিপ প্রভৃতি কাজে ওএমআর মেশিন ব্যাপক আকারে ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন