সঙ্গীতের রয়েছে নানা ধরণ, নানা স্বাদ। মানুষের ভিন্ন ভিন্ন পছন্দের কারণে গানের ধরণও বৈচিত্র্যময় হয়। আবার মনের অবস্থার উপরও মানুষের গানের পছন্দ নির্ভর করে। তাই ফোক, রক, মেটাল, পপ, জ্যাজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের গানের জন্ম হয়েছে। ভিন্ন রকমের কথা, সুর, তাল, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে এসব গানে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন ঘরানার গান সম্পর্কে জানতেই আমাদের এই আয়োজন। আজকে জানবো হেভি মেটাল নিয়ে।
মেটাল বা হেভি মেটাল ধারার গানের উৎপত্তি হয়েছে রক মিউজিক থেকে। মূলত রক মিউজিকের অনেকগুলো উপধারার মধ্যে এটি সবচাইতে জনপ্রিয় একটি উপধারা। ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে হেভি মেটালের জন্ম এবং উত্থান ঘটে।
হেভি মেটাল গানের মূল বৈশিষ্ট্য অতিমাত্রায় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, উচ্চ ও শক্তিশালী শব্দ এবং বিকৃত গলার স্বরের ব্যবহার। ইলেকট্রিক গিটারে রীফ এবং পাওয়ার কর্ডের ব্যবহার, ড্রামসে ডাবল প্যাডেলের ব্যবহার, কর্কশ গলায় গান এসব হেভি মেটাল গানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
হেভি মেটাল ব্যান্ডে সাধারণত একজন ভোকালিস্ট, একজন বেজিস্ট, একজন ড্রামার, একজন রিদম গিটারিস্ট এবং একজন লিড গিটারিস্ট থাকে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে একাধিক ভোকালিস্ট এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের উপস্থিতিও দেখা যায়। কিবোর্ডের উপস্থিতি অনেক ধরণের হেভি মেটাল ব্যান্ডেই দেখতে পাওয়া যায়। তবে হেভি মেটাল গানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইলেকট্রিক গিটার এবং ড্রামসের ব্যবহার।
১৯৬৮ সালে ব্রিটিশ ব্যান্ড ব্লাক সাবাথের জন্মের মাধ্যমেই হেভি মেটাল গানের উন্মেষ ঘটে। একই সময়ে লেড জেপলিন আর ডিপ পার্পল এই দুটি ব্যান্ডও হেভি মেটাল ধারাকে জনপ্রিয় করে তোলে। তবে বিকৃত রুচির এবং পীড়াদায়ক গান তৈরি করছে এই কথা বলে সেসময় এই ব্যান্ডগুলোকে প্রচুর সমালোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে হেভি মেটাল গানের চর্চা বন্ধ হয়ে যায়নি।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্লুজের সাথে হেভি মেটালের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন এক ধারার জন্ম দেয় জুডাস প্রিস্ট। মোটরহেড সূচনা করে
পাঙ্ক মেটাল। সেসময় আয়রন মেইডেন আর স্যাক্সনের মতো কিংবদন্তী ব্যান্ডগুলোর জন্মের ফলে হেভি মেটাল এক নতুন যুগের সূচনা করে। একই সাথে হেভি মেটাল গানের ভক্তরা পরিচিত হওয়া শুরু করে ‘মেটালহেড’ বা ‘হেডব্যাঙ্গার’ নামে।
আশির দশকে আরও নতুন উপধারার হেভি মেটাল আসতে শুরু করে। মেটালিকা এবং মেগাডেথ এই দুই যুগান্তকারী ব্যান্ড থ্রাশ মেটালের জন্ম দিয়ে হেভি মেটালকে নিয়ে যায় এক অন্য উচ্চতায়। আরও দুই জনপ্রিয় উপধারা ব্ল্যাক মেটাল ও ডেথ মেটালের অবতারণা ঘটে। এছাড়াও প্যান্টেরার মতো ব্যান্ড গ্রুভ মেটাল শুরু করে এবং লিংকিং পার্ক, কর্ন, স্লিপনট এসব ব্যান্ড ন্যু মেটাল শুরু করে।
হেভি মেটাল গানের কথা বা লিরিক ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। অসংখ্য বিষয় নিয়ে লেখা হয় এ ধরণের গান। প্রেম-ভালোবাসার বিরহ বা অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক, যুদ্ধ, যুদ্ধবিরোধী মানসিকতা, রাজনীতি সচেতনতা, মাদকাসক্তির কুফল, জন্ম-মৃত্যু এসব বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে হেভি মেটাল গানের কথায়। বিভিন্ন উপধারার মেটাল গান অনুযায়ী সেগুলোর কথাও ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তুর হয়ে থাকে। তবে অনেক গান কোন কথা ছাড়াই শুধুমাত্র বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে তৈরি করা হয় যেগুলোকে ইন্সট্রুমেন্টাল বলা হয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও সময়ের সাথে সাথে প্রচুর চর্চা হচ্ছে হেভি মেটাল গানের। রক্সট্রাটা, ডিফারেন্ট টাচ, ওয়ারফেজ, মাইলস এসব ব্যান্ড বাংলাদেশে মেটাল গান শুরু করে এবং তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে। বর্তমান সময়ে আর্টসেল, অর্থহীন, ক্রিপটিক ফেট, পাওয়ারসার্জ মেটাল গান করছে।