কোন চলচ্চিত্র দেখার সময় প্রায়ই আমরা দেখি যে কোন অ্যাকশন দৃশ্য স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরে দেখানো হচ্ছে, পুরো ব্যাপারটা ভালোভাবে বোঝানোর জন্যই বিশেষ বিশেষ দৃশ্যগুলো এভাবে দেখানো হয়। কিন্তু যেখানে পুরো ছবিটি একভাবে দেখানো হচ্ছে, তাহলে কয়েকটি দৃশ্য শুধু স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরে দেখানো সম্ভব কীভাবে ! একে বলা হয় “স্লো মোশন” (Slow Motion), যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ধীরগতি। চলচ্চিত্রে এই স্লো মোশন হল এমন একটি প্রযুক্তি যার সাহায্যে সময়কে ধীর করে দেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই প্রযুক্তি আবিস্কার করেন অগাস্ট মাসগার নামক এক অস্ট্রিয়ান ধর্মযাজক।
স্লো মোশনে কোন দৃশ্য দেখানোর জন্য ঐ দৃশ্যটি প্রথমে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে ধারণ করা হয়। এরপর প্লে-ব্যাক করার সময় একে স্বাভাবিক গতিতেই নিয়ে আসার ফলে এটি অনেক ধীরে ধারণকৃত বলে মনে হয়। আমরা অনেকেই জানি যে, চলচ্চিত্রে আসলে অনেকগুলো স্থির ছবি দ্রুতগতিতে প্রদর্শন করা হয়, যেগুলোকে ফ্রেম বলে। এগুলো এতই দ্রুত দেখানো হয় যে প্রতি সেকেন্ডে ২০টি থেকে কয়েক হাজার ফ্রেম দেখানো হয়।
স্লো মোশনে কোন দৃশ্য দেখানোর জন্য দুই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। একটিকে বলা হয় Over cranking, এবং অন্যটি Time Stretching। প্রথমটিতে প্রতি সেকেন্ডে ফ্রেমের সংখ্যা কমিয়ে স্লো মোশন সৃষ্টি করা হয়। যেমন স্বাভাবিক গতিতে যদি প্রতি সেকেন্ডে ২০টি ফ্রেম দেখানো হয়, তাহলে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ১০টি ফ্রেম দেখানো হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে একটি ফ্রেমের পরে আরেকটি ফ্রেম দেখানোর মাঝখানের বিরতি বাড়িয়ে দেয়া হয়।
স্লো মোশনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী হয় অ্যাকশন ধাঁচের ছবিতে। গাড়ি বা মোটর সাইকেল নিয়ে শূন্যে ঝাঁপ দেয়া, বিভিন্ন বিস্ফোরণ, গুলির গতি ইত্যাদি দেখাতে স্লো মোশন ব্যবহার করা হয়। বুলেট থেকে পাশ কাটিয়ে বেঁচে যাওয়া স্লো মোশনের বেশ জনপ্রিয় একটি ব্যবহার। এর শুরুটা হয় মূলত The Matrix ছবি থেকে। এই পদ্ধতিটিকে Speed Ramping বলে। এক্ষেত্রে সেকেন্ডে ৬০টি ফ্রেমের জায়গায় ২৪টি ফ্রেম দেখানো হয়।
চলচ্চিত্রে বিভিন্ন মারামারির দৃশ্য ধারণে স্লো মোশনের ব্যবহার প্রচুর, অনেক সময়ই দেখা যায় নায়কের ঘুষি খেয়ে ভিলেনের চেহারাই পাল্টে গেছে, এ ধরণের দৃশ্য দর্শকরা বেশ আনন্দ নিয়ে দেখেন। এসব চিত্র ছাড়াও, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলী দেখাতে স্লো মোশন ব্যবহার করা হয়। বজ্রপাতের দৃশ্য, ঝড়, ভূমিকম্প প্রভৃতি ঘটনা দেখাতে স্লো মোশনের ব্যবহার অনেক বেশী। এছাড়া, সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতেও স্লো মোশন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
চলচ্চিত্র ছাড়াও স্লো মোশনের আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র হল খেলার সম্প্রচার। ক্রিকেটে অহরহই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে স্লো মোশন ব্যবহার করা হয়। দৃষ্টিনন্দন কোন শট, বা আউটের সময় স্লো মোশনে দৃশ্যটি দেখানো হয়। রান আউটের বেলায় মাঠে থাকা আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নেন, থার্ড আম্পায়ার স্লো মোশনে পুরো ঘটনাটি দেখে সিদ্ধান্ত দেন। খেলার মাঠ ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদ সম্প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী দেখাতে স্লো মোশন ব্যবহার করা হয়।