বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এবং নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বসবাসকারী আক্তারার জামান নামের এক যুবককে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে অদ্ভুত অভিনব এক অভিযােগের ভিত্তিতে।
২২ বছর বয়সী এই যুবকের বিরুদ্ধে গত বছরের নভেম্বরে (২০১৪) মামলা করে আমেরিকার ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এবং প্রতিষ্ঠানটির ট্রাভেল পার্টনার অরবিটজ।
২০১৩ সালে জামান Skiplagged.com নামের একটি ওয়েবসাইট খোলেন। ওয়েবসাইটটি ভ্রমণকারীদের সস্তায় প্লেনের টিকেট কিনতে সাহায্য করতো। এটার নাম দেয়া হয়েছিলো "hidden city" ticketing ।
আসলে এই ওয়েবসাইটের কৌশলটি হচ্ছে, এরা সব জায়গার প্লেনের টিকেটের দাম খুঁজে বের করে। এরপর সরাসরি আপনার গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পরিবর্তে তারা এমন একটি রুটের টিকেট কেনার পরামর্শ দেয় যেটার একটি স্টপেজ আছে আপনার সেই গন্তব্যস্থলেই। এর ফলে আপনার টিকেটের দাম সরাসির টিকেটের দামের প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
যেমন ধরুন, আপনি নিউইয়র্ক সিটি থেকে আটলান্টা যাবেন। সরাসরি গেলে আপনার প্লেনের টিকেটের খরচ বেশি পড়বে। কিন্তু আপনি নিউইয়র্ক থেকে মায়ামির একটি টিকেট কিনবেন যেটার একটা স্টপেজ থাকবে আটলান্টায়।
এতে আপনার নিউইয়র্ক থেকে আটলান্টা যেতে খরচ পড়বে তুলনামূলক অনেক কম। এই উপায়ে যখন আপনি মায়ামি যাওয়ার টিকেট কাটবেন তখন প্লেনটি আটলান্টায় থামলে সেখানে নেমে যাবেন এবং পরবর্তী পথটুকু আর যাবেন না। এভাবেই আপনি আপনার টাকা বাঁচাতে পারেন। সাধারণত এই উপায়ে এয়ারলাইন্সের ট্র্যাভেল এজেন্টগুলো তাদের টিকেটের দাম নির্ধারণ করে।
তবে এভাবে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনাকে শর্ত মানতে হবে ২টি। প্রথমতঃ আপনাকে ওয়ান ওয়ে টিকেট কাটতে হবে আর দ্বিতীয়তঃ আপনার সাথে চেক করার মত বড় কোন ব্যাগ থাকা যাবে না। তবে সবসময়ই যে এ কৌশল কাজ করবে তা কিন্তু নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা মিলে যেতে পারে।
আক্তারার জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এবং অরবিটজ এই পদ্ধতিকে “unfair competition” বলে উল্লেখ করেছেন এবং এ ধরণের ভ্রমণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। তারা জামানের কাছ থেকে তাদের ৭৫ হাজার ডলার রাজস্ব পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন।
কিন্তু জামান বলছেন তার এই ওয়েবসাইটে কোনরকম বেআইনি কাজ তিনি করছেন না। বরং তিনি মানুষের উপকারের চেষ্টা করছেন।
এভিয়েশন কন্সাল্টিং ফার্ম বয়েড গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট মিঃ বয়েড একই মত জানিয়ে বলেন, তিনি এখানে বেআইনি কোন কিছুই দেখছেন না।
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া জামান বড় হয়েছেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। রেন্সিলায়ের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে তিনি কম্পিউটার সায়ন্সে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ম্যানহাটনে বসবাস করছেন। তবে তিনি একটি টেকনোলোজি কোম্পানিতে কাজ করেন যেটার নাম তিনি গণমাধ্যমে উল্লেখ করতে রাজী হননি।