মানুষ পৃথিবীর যেখানে যায় সেখানেই তার আবর্জনা ফেলে আসে। এমনকি পৃথিবীর বাইরের চাঁদও বাদ যায়নি আবর্জনার ফেলার স্থানের তালিকা থেকে। এখন পর্যন্ত ডজনখানেক চন্দ্রাভিযান হয়েছে। এসব অভিযানের কিছু ছিলো মনুষ্যবিহীন কিছু আবার মানুষসহ। হিসেব করে দেখা গেছে এসব অভিযানের মাধ্যমে মানুষ এরই মধ্যে প্রায় ৪ লাখ পাউন্ড ওজনের জিনিস চাঁদে ফেলে এসেছে।
এসব জিনিসের মধ্যে রয়েছে মূলত রয়েছে রকেট এবং স্পেসক্রাফটের অকেজো অনেক যন্ত্রাংশ। অভিযান শেষ হওয়ার পর ইচ্ছে করেই চাঁদে ফেলে আসা হয়েছে এসব জিনিস। কিন্তু এসব ছাড়াও কিছু অদ্ভুত জিনিসও মানুষ ফেলে এসেছে চাঁদে যার মধ্যে রয়েছে শিল্পকর্ম, খেলাধূলার উপকরণ এমনকি মলমূত্রভর্তি ব্যাগও। এমনই ৮টি অদ্ভুত জিনিসের তালিকা জেনে নেয়া যাক আজ।
১. গলফ বল ২টি
অ্যালান শেপার্ড অ্যাপোলো-১৪ মিশনে ৬টি গলফ সেট আর কয়েকটি গলফ বল নিয়ে যান। কয়েকবারের চেষ্টায় তিনি সেই গলফ বল মারতে সক্ষম হন এবং চাঁদের স্বল্প মাধ্যাকর্ষণে সেটা অনেকদূর অবধি যায়। অবশ্য অ্যালানের ভাষ্যমতে সেটা ‘মাইলস এন্ড মাইলস’ দূরে গিয়েছিল। এরকম ২টি শট তিনি করেন এবং বলগুলো তিনি আর কুড়িয়ে আনেননি। সুতরাং চাঁদে এখনও ২টি গলফ বল রয়ে গিয়েছে।
২. স্পেস বুট ১২ জোড়া
অ্যাপোলো-১১ অভিযানের শেষে শুধুমাত্র মলমূত্রের ব্যাগই নয়, নীল আর্মস্ট্রং এবং বুজ অলড্রিন প্রায় ১০০টির মত জিনিস যেগুলো তাদের আর কাজে লাগবে না সেগুলো ফেলে এসেছিল চাঁদে তাদের রকেটের ওজন কমানোর জন্য। এসবের মধ্যে ছিল স্পেসবুট, ক্যামেরা, ফিল্ম আর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। এছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে আরো অনেক কিছুই তারা রেখে এসেছিলেন চাঁদে।
এগুলোর মধ্যে ছিল চাঁদের বুকে স্থাপন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা (যদিও তারা ধারণা করেছিল রকেটের আগুনের কারণে সেটা ভস্মীভূত হয়ে গেছে), একটি স্বর্ণের লকেট এবং একটি সিলিকন ডিস্ক যেটাতে আমেরিকার রাজনীতিবিদ, নাসার বিজ্ঞানী আর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের শুভেচ্ছাবাণী ধারণ করা ছিল।
৩. রিচার্ড নিক্সনের স্বাক্ষর করা ফলক
মানুষের চন্দ্রজয়ের অভিযানের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। তাই তার স্বাক্ষর করা একটি ফলক চাঁদে রেখে আসে অভিযাত্রীরা। তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যার স্বাক্ষর চাঁদে রয়েছে।
৪. বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম
যদিও এ ব্যাপারটি সর্ম্পকে নিশ্চিত নয়, অনেকেই একে গুজব বলেছেন, কিন্তু এটা বিশ্বাস করার মত যথেষ্ট কারণও রয়েছে যে চাঁদে বেশ কয়েকটি চিত্রকর্মও ফেলে আসা হয়েছে।
১৯৬০ সালে ভাস্কর ফরেস্ট মায়ারস একটি ক্ষুদ্র টুকরায় ৬ জন নামকরা চিত্রশিল্পীর অঙ্কন সংরক্ষণ করেন যেটা ঠিক করা হয় চাঁদে রেখে আসা হবে। ক্ষুদ্র এই চিত্রকর্মকে তিনি ‘মুন মিউজিয়াম’ নামকরণ করেন। এটাতে ছিল ক্লায়েস ওল্ডেনবার্গ-এর আঁকা মিকি মাউসের মত একটি ইঁদুর, অ্যান্ডি ওয়ারহোলের আঁকা সূচালোমতন দেখতে কিছু একটা।
কিন্তু নাসার সাথে এ পরিকল্পনা সফল করতে ব্যর্থ হন মায়ারস। কিন্তু অ্যাপোলো ১২-এর এক ইঞ্জিনিয়ারকে সে চিত্রকর্ম চাঁদে রেখে আসার ব্যাপারে রাজি করতে সক্ষম হন। চোরাইভাবে সেটি স্পেসক্রাফটে করে চাঁদে পাঠানো হয়। কিন্তু আদৌ সেটি চাঁদে রেখে আসা হয়েছে কিনা সেটি খোদ মায়ারসও নিশ্চিত নন।
৫. মলমূত্রভর্তি ব্যাগ ৯৬টি
অ্যাপোলো মিশনের সময় স্বাভাবিকভাবেই নভোচারীদের মহাকাশে মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়েছিলো। তাদের এসব দৈহিক বর্জ্য রাখা হয়েছিলো ৯৬টি প্লাস্টিক ব্যাগে। চাঁদ থেকে ফেরার সময় দেখা গেলো চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথরগুলোর কারণে রকেটের ওজন বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই রকেট হালকা করার জন্য মলমূত্রের ব্যাগগুলো তারা চাঁদেই ফেলে আসা হলো। সম্প্রতি কোন কোন অ্যাট্রোবায়োলজিস্ট ধারণা করছেন, এসব মলমূত্রের মধ্যে কোন ব্যাকটেরিয়া যদি সেখানে টিকে থাকতে পারে তাহলে তা থেকে চাঁদে প্রাণের স্পন্দন ঘটতে পারে।
৬. একটি বিতর্কিত চিত্রকর্ম
‘ফলেন অ্যাস্ট্রোনট’ হচ্ছে সাড়ে তিন ইঞ্চি আকারের একটি অ্যালুমিনিয়ামের ফলক। এটি তৈরি করেন বেলজিয়ামের চিত্রশিল্পী পল ভ্যান হয়েডঙ্ক। অ্যাপোলো ১৫ মিশনে এটি চাঁদে রেখে আসেন নভোচারী ডেভিট স্কট। আগের মিশনে মারা যাওয়া ১৪ জন নভোচারীর নাম লেখা ছিল এতে।
৭. বাজপাখির পালক
অ্যাপোলো-১৫ মিশনে ডেভিড স্কট একটি পরীক্ষা করেন। একটি ভ্যাক্যুয়ামের মধ্যে তিনি একটি হাতুড়ি আর একটি বাজপাখির পালক একসাথে ফেলে দেখেন যে বস্তু দুটি কীভাবে পড়ে। দেখা যায় বস্তু দুটি একই সাথে মাটিতে পড়েছে। শেষে স্কট বাজপাখির পালকটি সেখানে ফেলে আসেন।
৮. একজন নভোচারীর একটি পারিবারিক ছবি
অ্যাপোলো-১৬ মিশনের সময় চার্লস ডিউক তার পরিবারের একটি ৩×৫ ইঞ্চি ছবি চাঁদের মাটিতে রেখে আসেন যে ছবিতে তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে ছিল।
ঠিক কী কারণে ডিউক ছবিটা সেখানে রেখে এসেছিল তা তিনি বলেননি। তবে ছবিটার পিছনে তিনি একটা বার্তা লিখেছিলেন। “এটা পৃথিবীর নভোচারী ডিউকের পরিবারের ছবি যে কিনা এপ্রিল, ১৯৭২ সালে চাঁদে অবতরণ করে”।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চাঁদের বুকে এতদিন ধরে থাকা এ ছবিটা হয়তো ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে।