অদৃশ্য বাটি

বিজ্ঞান নিয়ে অনেকের মনেই ভয়ভীতি থাকে। জটিল সব সূত্র, গাণিতিক ব্যাখ্যা আর কাঠখোট্টা সব শব্দ শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। জটিল সব ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে সহজভাবে তুলে ধরার কাজটিই করছে সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে ২টি করে ৫২ সপ্তাহে মোট ১০৪টি মজার মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হবে তোমাদের আর বলে দেয়া হবে সেটা কেন হলো, কিভাবে হলো। আজ এক ঝলক জেনে নেয়া যাক সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানের সপ্তম পর্বে দেখানো ‘Invisible Glass’ বা অদৃশ্য বাটি পরীক্ষাটি।

কোন জিনিসকে অদৃশ্য করা জাদু বিদ্যা ছাড়া আর কোন কিছুতেই সম্ভব নয়, যদিও জাদু বলতে কিছু আছে কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। আমরা চাইলে এই এক্সপেরিমেন্টের সাহায্যে জাদুকর বনে যেতে পারি, তবে এক্ষত্রে জাদুর ছিটেফোটাও নেই, যা ঘটবে তা হল পদার্থবিদ্যার কিছু কৌশল।

যা যা লাগবেঃ
জাদুকর বনার জন্য আমাদের আলাদিনের চেরাগের মতো তেমন কিছুই লাগবে না। আমাদের হাতের কাছের কিছু উপাদান দিয়েই আমরা এ পরীক্ষাটি দেখাব। আমাদের দরকার ভেজিটেবল অয়েল, একটা বড় কাঁচের স্বচ্ছ বাটি এবং আরেকটা ছোট স্বচ্ছ বাটি যা বড় বাটিতে সম্পূর্ণ রুপে বসানো যায়।

যেভাবে করবোঃ
প্রথমে ছোট বাটিটা বড় বাটির ভেতরে বসাই। যে দিক থেকেই তাকাই ভেতরের বাটিটা স্পষ্ট দেখা যাবে। এবার বড় বাটিতে আস্তে আস্তে ভেজিটেবল অয়েল ঢালি যাতে ভেতরের বাটিতে তেল না ঢুকে। লক্ষ্য করলে ভেতরের বাটির অস্তিত্ব বুঝা যাবে। এখন শুরু হবে আসল ম্যাজিক। ক্রমান্বয়ে আরও তেল ঢালতে থাকি যতোক্ষণ না পর্যন্ত ভেতরের বাটি সম্পূর্ণ ডুবে যায়। এরই সাথে সাথে শুরু হলো ম্যাজিক। ভেতরের বাটি উধাও। যে দিক থেকে তাকাও না কেন ভেতরের ছোট বাটি আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তুমি যদি বাটির একপাশে কোন বস্তু যেমনঃ পেন্সিল রেখে অন্য পাশ থেকে দেখ তুমি পরিষ্কার দেখতে পাবে কিন্তু মাঝখানের ছোট বাটিটি দেখবে না। আসলেই কি উধাও! না, হাত দিয়ে খুঁজে দেখলেই আমরা ছোট বাটিটা খুঁজে পাব। কিন্তু সেটি চোখে ধরা পড়বে না। আর তেল থেকে যখন বাটিটা তুলবো তখন আমরা আবার দেখতে পাবো।

কেন হলোঃ
কোন বস্তুকে দেখতে হলে আলোর প্রয়োজন। আলো যখন বস্তুর উপর পড়ে তখন প্রতিফলন ঘটে বলে আমরা দেখতে পায়। আলো যখন কোন স্বচ্ছ মাধ্যমে গমন করে তখন তার গতিপথ নির্ভর করে তার উপাদানের প্রতিসরাঙ্কের(Index of material) উপর। আলো যখন বায়ু মাধ্যম থেকে কাঁচের বাটির উপর পড়ে তখন কিছু আলো প্রতিফলিত হয় এবং কিছু আলো সামান্য বেঁকে গিয়ে মাধ্যমের ভেতর দিয়ে প্রতিসরিত হয়। এরপর আলো তেলের মধ্য দিয়ে গমন করে। এক্ষেত্রে তেল ও কাঁচের প্রতিসরাঙ্কের মান সমান বলে যখন কাঁচ থেকে তেল এবং আবার তেল থেকে ভেতরের বাটির কাঁচে প্রবেশ করে তখন আলো সমান ভাবে বেঁকে সমান গতিতে বেরিয়ে আসে।ফলে ভেতরের বাটির কাঁচে কোন প্রতিফলন ঘটেনা, কেবল প্রতিসরণ ঘটে। আর প্রতিফলন হয় না বলেই আমরা ভিতরের বাটির অস্তিত্ব চোখে বুঝতে পারিনা এবং অদৃশ্য বলে মনে হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন