উড়ন্ত কৃত্রিম পাখি

ভবিষ্যৎ কেউ জানেনা কিন্তু ভবিষ্যৎ চাইলেই নিজের মত করে তৈরি করা যায়। এটাই যেনো প্রমান করে যাচ্ছে বিজ্ঞানীরা। এক সময়ের অসাধ্যগুলো ক্রমে সাধ্যের ভেতরে নিয়ে আসছে নিত্য নৈমিত্তিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির অবদানের অন্যতম সংযোজন হচ্ছে ড্রোন। ড্রোন শব্দের আভিধানিক অর্থ হল গুঞ্জন। এর চলার শব্দের সাথে মৌমাছির গুনগুনের মিল থাকার কারণেই এই নাম।

ড্রোন অথবা ইউ.এ.ভি (Unmanned Aerial Vehicle) এই রিমোট কন্ট্রোলচালিত উড়ুক্কু যান গত কয়েক বছরে মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং এর মধ্যে একটি খুবই সংবেদনশীল ক্যামেরা লাগানো থাকে। এই যন্ত্রটির কাজ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। রিমোটের পাওয়ার অনেক দূর পর্যন্ত কাজ করে ড্রোনের ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক সময়ে রিমোটবিহীন ড্রোনের আবিষ্কার হয়েছে যেটি সেন্সরের সাহায্যে ব্যবহারকারি র ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে কাজ করে।

ড্রোন মুলত দুই ধরনের। এক ধরনের ড্রোন তৈরি করা হয় বাণিজ্যিক কাজের জন্যে এবং অন্য ড্রোন তৈরি করা হয় বিনোদনমূলক ও অন্যান্য কাজ (যেমনঃ খেলাধুলার কাজে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবহারের কাজে) ব্যবহারের জন্যে।

বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ড্রোন হচ্ছে মনুষ্যবিহীন বিমান প্রকৃতির, বা দূরনিয়ন্ত্রিত চালকবিহীন বিমান বা যন্ত্র। এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সামরিক কার্যাদিতে। প্রচলিত বিমানযুদ্ধে পাইলটের জীবনহানি বা শত্রুর হাতে বন্দী হওয়ার যে আশঙ্কা থাকে তা এড়াতেই এই পাইলটবিহীন বিমান। মনুষ্যবিহীন আকাশযান হচ্ছে দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে পরিচালিত বা সরাসরি মনুষ্য নিয়ন্ত্রকবিহীন স্বয়ংক্রিয় বিমান পরিচালনা ব্যবস্থা ও এর সাহায্যে দূরবর্তী স্থানে হামলা চালানোসহ গোয়েন্দা নজরদারি করা যায়। এছাড়া, মনুষ্যবিহীন আকাশযান বায়ুর গতিবেগ ও আবহাওয়ার ক্রিয়া কৌশালাদির উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বড় ধরনের ড্রোন বানাচ্ছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের  সুস্পষ্ট ভিডিও বা তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া, বর্তমানে আমেরিকান সেনাবাহিনীতে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ড্রোন যুক্ত করা হচ্ছে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সৈন্যদের নিরাপত্তার জন্যে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, বানিজ্যিক ড্রোনগুলো ছাড়াও বিনোদনমূলক ও অন্যান্য যে ড্রোনগুলো রয়েছে, সেগুলো দিয়েও নানা রকম কাজ করা হয়। পিৎজা ডেলিভারি থেকে শুরু করে খেলার মাঠের এক্সক্লুসিভ ফুটেজ সবই করা হচ্ছে ড্রোনের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় ড্রোনের ব্যবহার করা হয় কিছু এক্সক্লুসিভ ভিডিও সংগ্রহের জন্য। ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিকেও ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, উপর থেকে আলোকচিত্র গ্রহণ, বৈদ্যুতিক লাইন পরিদর্শন, দুর্গম এলাকায় চিকিৎসার ঔষধ সরবরাহ, শত্রুকবলিত এলাকার কাছাকাছি জায়গা পরিদর্শন, সীমান্ত এলাকায় পরিভ্রমণ ও নজরদারি, ভূমি জরিপ ও পরিমাপ, বন্যপ্রাণীর সংখ্যা গণনা ইত্যাদি কাজেও ড্রোন ব্যবহার করা হয়। গুগলের নতুন মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটেরের গোপন প্রযুক্তি ল্যাব গুগল এক্স জানিয়েছে, তারা আগামী ২ বছরের মধ্যেই তাদের ডেলিভারি ড্রোণের মাধ্যমে চালু করতে যাচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন