এবারে ভলিবল খেলা

আমাদের দেশে যেসব খেলা শীতকালীন খেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, তার মধ্যে ব্যাডমিন্টনের পরেই ভলিবলের স্থান। আজ থাকছে ভলিবল খেলার নিয়মাবলী –

গোড়ার কথা : ১৮৯৫ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে উইলিয়াম জি মর্গানের হাত ধরে ভলিবল খেলাটির জন্ম। প্রথমে ভলিবল খেলার নাম ছিল ‘মিনটোনেট’। পরে নাম বদলে হয় ভলিবল। ১৯৪৭ সালে প্যারিসে ১৩ সদস্য দেশ নিয়ে ‘ফিভ’ বা আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশন গঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক ভলিবল সংস্থা (FIVB) এর সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের লৌজানে অবস্থিত। ১৯৪৯ সাল থেকে ভলিবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ আয়োজিত হয়। ১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিক থেকে ভলিবল পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছে অলিম্পিকের আসরে। বাংলাদেশেও খেলাটি বহুল প্রচলিত। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন গঠিত হয় ।
 
কোর্টের পরিমাপ : ১৮ মিটার (৫৯ ফুট) লম্বা ও ৯ মিটার (২৯.৫ ফুট) চওড়া কোর্টে খেলা হয় যা একটি নেট বা জাল দ্বারা দুটি ৯মি×৯মি অর্ধে বিভক্ত। মাঝ বরাবর খাড়া জাল থাকে এবং জালের উপরের প্রান্ত ৮ ফুট উঁচুতে থাকে। জালটির দৈর্ঘ্য ৯.৫০ মিটার ও প্রস্থ ১ মিটার।

এর শীর্ষ প্রান্ত কোর্টের কেন্দ্রের ভূমি থেকে ২.৪৩মি (পুরুষদের জন্যে) ও ২.২৪মি (নারীদের জন্যে) উচ্চতায় অবস্থিত। যদিও শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের জন্যে উচ্চতার প্রয়োজনমতো পরিবর্তন ঘটে।
 
বল : চামড়ার বলের পরিধি ৬৫ থেকে ৬৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২৬০ থেকে ২৮০ গ্রাম।
 
ভলিবল খেলার স্থান :
ভলিবল খেলা বিভিন্ন স্থানে হয়ে থাকে তবে আন্তর্জাতিক ভাবে তিনটি মাঠে এই খেলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছেঃ বীচ ভলিবল, ইনডোর ভলিবল, ঘাস ভলিবল।

খেলোয়াড় : ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে একটি দল গঠিত হবে। মাঠে ৬ জন খেলোয়াড় নিয়ে খেলতে হবে। প্রতি সেটে সর্বাধিক ৬ জন খেলোয়াড় বদল করা যাবে। খেলা আরম্ভের সময় সামনের সারিতে ৩ জন ও পেছনের সারিতে ৩ জন খেলোয়াড় দাঁড়াবে।

খেলার স্কোরিং :  ভলিবল প্রতিযোগিতায় ৫টি সেটের মধ্যে যে দল ৩টি সেটে জয়লাভ করবে সে দলই বিজয়ী হবে। যে দল ভুল করবে সে দল সার্ভিস হারাবে এবং অপর পক্ষ সার্ভিস ও একটি পয়েন্ট লাভ করবে।

যে দল আগে কমপক্ষে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে ২৫ পয়েন্ট অর্জন করবে, সে দল সেট বিজয়ী হবে। যদি উভয় দলের পয়েন্ট ২৪-২৪ হয় তাহলে এক্ষেত্রে ডিউস হবে এবং ২ পয়েন্টের ব্যবধান না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতে থাকবে।

এভাবে প্রথম থেকে চতুর্থ সেট পর্যন্ত চলবে। পঞ্চম সেটে যে দল আগে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে ১৫ পয়েন্ট অর্জন করবে, সে দল বিজয়ী হবে। আর যদি উভয় দলের পয়েন্ট ১৪-১৪ হয়, তাহলে ২ পয়েন্টের ব্যবধান না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতে থাকবে।
 
খেলা পরিচালনা : একজন করে রেফারী, আম্পায়ার, স্কোরার এবং দুজন লাইন জাজ দ্বারা খেলা পরিচালনা করা হয়।
 
খেলার নিয়ম : টস বিজয়ী দল হয় সার্ভিস করবে বা কোর্ট পছন্দ করবে। সার্ভিস অঞ্চলে দাঁড়িয়ে বলকে শূন্যে তুলে আঘাত করে সার্ভিস করতে হয়। বলটাকে আঘাত করার পরই সার্ভার কোর্টে প্রবেশ করতে পারবে।

রিসিভিং দল যখনই একটি সার্ভিস লাভ করবে, তখন ওই দলের সকল খেলোয়াড় ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরে একবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। এটাকে রোটেশন পদ্ধতি বলে।

খেলা চলাকালীন বলকে বিপক্ষের কোর্টে পাঠানোর জন্য একদল সর্বাধিক তিনবার বলটিতে স্পর্শ বা আঘাত করতে পারবে। তবে ব্লকের সময় যদি কোনো স্পর্শ হয়, সেটাকে এই তিনবারের মধ্য গণনা করা হবে না। একজন খেলোয়াড় পরপর দুইবার বলে স্পর্শ করতে পারবে না।

শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে বলে আঘাত করতে পারবে। সার্ভিসের বল যদি নেট স্পর্শ করে বিপক্ষকোর্টে যায় তাহলে সঠিক বলে ধরা হয়।

বিপক্ষ দলের কোর্টে বল থাকাকালীন নেটের উপর দিয়ে সেই বলকে আঘাত করা যাবে না। পেছনের সারির খেলোয়াড়রা কখনই আক্রমণ করতে এসে জালের উপরের লাইনের উচ্চতায় বলকে ফেরত পাঠাতে পারবে না ও ব্লক করতে পারবে না।

প্রতি সেট শেষ হওয়ার পর উভয় দল রেফারীর সংকেতে কোর্ট বদল করবে।
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন