শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের দেহের প্রয়োজন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। কিন্তু সেগুলো অবশ্যই হতে হবে সঠিক পরিমাণে। কম হলে যেমন আমাদের শরীরের জন্য খারাপ তেমনি কোন উপাদান বেশি হয়ে গেলেও আমাদের দেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমনঃ লৌহ বা আয়রণ আমাদের দেহের একটি প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। কিন্তু এই উপাদান অতিরিক্ত পরিমাণ হলে তা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যা থেকে স্মৃতিশক্তি বিলোপ বা আলজেইমার’স ডিজিসের সৃষ্টি করে।
এক্ষেত্রে মানবদেহে লৌহের পরিমাণ কত সেটা পরিমাপ করে আলজেইমার হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা জানা যেতে পারে। যেহেতু মানবদেহে লৌহের পরিমাণ কম হলে তার বৃদ্ধির জন্য ওষুধ রয়েছে ঠিক তেমনি পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা রয়েছে।
আলঝেইমার’স ডিজিস স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই, রোগটি অগ্রগতির সাথে সাথে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে, যা তাকে মৃত্যুর পথেই পরিচালিত করে।
১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক অ্যালয়েস আলজেইমার সর্বপ্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন, আর তারই নাম অনুসারেই এ রোগের এমন নাম রাখা হয়। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশী লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন।
তবে ঠিক কী কারণে এই রোগ সৃষ্টি হয় তা এখনও ঠিকভাবে জানা যায়নি। অনেকদিন ধরে ধারণা ছিল বেটা-অ্যামিলয়েড নামক একটা প্রোটিন এই রোগের জন্য দায়ী কিন্তু এটি প্রতিকারের ওষুধ দেয়া হলেও রোগীর উন্নতির কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
গবেষণা বলছে যাদের আলজেইমার রয়েছে তাদের মস্তিষ্কে লৌহের পরিমাণ বেশি পাওয়া গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের একদল গবেষক ১৪৪ জন ব্যক্তির উপর একটি গবেষণা চালায় যারা ৭ বছর ধরে এ রোগে আক্রান্ত।
সেখানে ব্যাপারটির সত্যতা পাওয়া যায়। দলটি আরও আবিষ্কার করে, ApoE4 নামক জিন থাকলে আলজেইমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুন বেড়ে যায় যেটি সরাসরি উচ্চমাত্রার আয়রনের সাথে সংযুক্ত। তারা জানান, আয়রন অধিক মাত্রায় বিক্রিয়াশীল। তাই মস্তিষ্কের নিউরনের রাসায়নিক উপাদানগুলোর সাথে বিক্রিয়া করে এটি সমস্যা সৃষ্টি করে।
শরীরে আয়রনের পরিমাণ সঠিক রাখতে নিয়মিত রক্তদান করা উচিত। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা রক্ত দিলে তাদের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। যদিও আলজেইমার প্রতিকারযোগ্য নয় কিন্তু কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো মস্তিষ্কের খনিজ উপাদানের পরিমাণ ঠিক রাখে। এসব ওষুধ মস্তিষ্কে লৌহের পরিমাণ ঠিক রাখতে সহায়তা করে।