মাটি নয়, ক্রিস্টালের গুহা

ক্রিস্টাল শব্দটির সাথে তোমরা পরিচিত তো? জানো তো এটি কি? ক্রিস্টাল হচ্ছে খুব পাতলা বা স্বচ্ছ রকমের পদার্থ, যা আলো সুপরিবাহী। ক্রিস্টাল  শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে স্ফটিক। ক্রিস্টাল এতোটাই পরিষ্কার যে এর মধ্য দিয়ে আলো চলাচলে সামান্য রকম বাধাও আসে না।

নিশ্চয়ই এখন তোমাদের মাথায় গ্লাস বা কাঁচের কথা ঘুরছে। হ্যাঁ, প্রায় এইরকম ই একধরনের পদার্থ এটি।

উত্তর এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরের খনি আছে, কিছু দেশে স্বর্ণের খনিও আছে। কিন্তু ক্রিস্টালের খনির কথা কখনো শুনেছো তোমরা ?

মেক্সিকোর নেইকা শহরে এরকমই একটি গুহার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা গুহা নয়, বরং একটি বৃহদাকার ক্রিস্টালের খনি। সর্বপ্রথম ১৯১০ সালে একজন শ্রমিক ভূ-পৃষ্ঠের ১২০ মিটার নিচে এক মিটার লম্বা একটি ক্রিস্টাল দেখতে পান। এর প্রায় ৯০ বছর পর ২০০০ সালে এখানেই মাটির প্রায় ৩০০ মিটার নিচে U আকৃতির একটি গুহার সন্ধান পাওয়া যায়। পানি পাম্প করে গর্ত করার সময় ৯০ ফুট নিচে আবিষ্কৃত হয় ক্রিস্টাল গুহা ‘লা কুয়েভা ডি ক্রিস্টালেস’।

পৃথিবীর উপরিভাগে বা ভেতরে এর মতো আর কোনো কিছুই নেই। এখানে জিপসামের ( CaSo4 . 2H2O ) কলামগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক ক্রিস্টাল। নানা আকৃতির ছোটো বড় ক্রিস্টালে বোঝাই ছিলো এই গুহা। এই গুহাতেই পাওয়া যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিস্টাল, যার দৈর্ঘ ১২ মিটার, ব্যাস ৪ মিটার এবং ওজন ছিলো প্রায় ৫৫ টন।

খনির ভিতরে খনিজ পদার্থের অবয়ব ধারণ দুই উপায়ে হয়ে থাকে। যার একটির নাম Stalactite ও অপরটি হচ্ছে Stalagmite। বিন্দু বিন্দু পানি বা খনিজ পদার্থ পড়ার ফলে গুহার তলদেশ থেকে যে ক্রমান্বয়ে গোলাকার বা চেপ্টা আকৃতির খনিজ পদার্থের দণ্ড সৃষ্টি হয় তাকে Stalagmite বলা হয়। আর বিন্দু বিন্দু পানি বা খনিজ পদার্থ নিঃসৃত হয়ে গুহার ছাদ থেকে যে ঝুলন্ত খনিজ পদার্থের দণ্ড বা লম্বমান তুষারকণার সৃষ্টি হয় তাকে Stalactite বলা হয়। 

অতিরিক্ত গরমের কারণে সাধারন মানুষের পক্ষে এই গুহায় বেশিক্ষন অবস্থান করা সম্ভব না। গড়ে ৫০ ডিগ্রীর উপর তাপমাত্রা থাকে সেখানে। গুহার ভেতর আটকে থাকা পানিগুলো প্রায় পাঁচ লাখ বছর ধরে একটানা ৫০ ডিগ্রীরও বেশি তাপমাত্রায় আবদ্ধ থাকতে থাকতে ক্রিস্টালে পরিণত হয়েছে। আর এই অতিরিক্ত তাপের কারণ হচ্ছে গুহার ঠিক নিচে অবস্থিত ম্যাগমা চেম্বার। ২০০৬ সালে একদল বিজ্ঞানী বিশেষ ধরনের পোশাক পরে এই খনিতে গবেষণা চালান। তখন দেখা যায় গুহার নিচের দিকের অংশে দানবীয় আকৃতির অনেকগুলো ক্রিস্টালের ব্লক রয়েছে। আবার দালানের পিলারের মত গুহার ভিতরেও নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত অনেকগুলো ক্রিস্টালের স্তম্ভ রয়েছে।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন