বাঘের বাজারের বাঘেরা

গাড়ি করে বেড়াতে যাচ্ছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। হঠাৎ রাস্তা আটকে দাঁড়ালো গোটা কয়েক বাঘ। ভাবুন তো একবার তখনকার অবস্থা। ঠিক এমন অনুভুতিরই মুখোমুখি হবেন রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বেড়াতে গেলে। এখানে প্রাণীগুলো ঘুরে বেড়ায় খোলা পরিবেশে আর দর্শনার্থীরা

তাদের দেখার সুযোগ পান নিরাপদ দূরত্ব থেকে! তবে হিংস্র প্রাণী যেমন বাঘ, সিংহ আর ভল্লুকের ডেরায় সরাসরি ঘুরে আসতে পারবেন কর্তৃপেক্ষর বাসে করে। চাইলে পুরো একটা দিনের পরিকল্পনা করে সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্রের দিক দিয়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই সাফারি পার্ক থেকে। ৩ হাজার ৬শ ৯০ একর আয়তনের এই সাফারি পার্কটিকে ৫টি অংশে ভাগ করা হয়েছে।

১. কোর সাফারি
কোর সাফারির ভেতরে গাড়ি ছাড়া কোনো পর্যটককে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না। কারন এখানে হিংস্র প্রাণীদের অবাধ বিচরণ। কোর সাফারির ভেতরে পর্যটকদের পরিদর্শনের জন্য রয়েছে দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস। নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে গাড়ি কিংবা জিপে করে প্রাকৃতিক পরিবেশে চড়ে বেড়ানো বন্যপ্রাণী দেখা যায় কোর সাফারিতে।

১২শ সতের একর কোর সাফারির মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, কালো ভল্লুক, আফ্রিকান চিতা, সাম্বার, গয়াল, হাতি এবং মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, ও প্যারা হরিণ। এছাড়া আফ্রিকান সাফারির মধ্যে দেখতে পাবেন বাঘ, সিংহ, সাদা, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াইল্ডবিস্ট, অরিচ, ব্ল্যাক বাক, ভাল্লুকসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী।  

২. সাফারি কিংডম
সাফারি কিংডমের ৫৫৬ একর আয়তনের মধ্যে রয়েছে ম্যাকাওল্যান্ড। ম্যাকাওল্যান্ড বিচিত্র রঙা পাখিদের জগত। এখানে পাখিরা উড়ে এসে আপনার শরীরে বসবে। ম্যাকাওল্যাণ্ডে রয়েছে নীল-সোনালি, সবুজ ম্যাকাও এর সঙ্গে আফ্রিকান গ্রে প্যারট, টিয়া, পেলিকেন, লুটিনো রিংনেক প্যারটসহ প্রায় ৩৪ প্রজাতির আফ্রিকান পাখি। পাশেই রয়েছে তিনটি পাখিশালা। এখানে দেখা মিলবে ধনেশ, বিভিন্ন প্রজাতির প্যারট, ফিজেন্ট ধনেশ, ফ্লেমিংগো, ব্ল্যাক সোয়ান ও মান্ডারিন ডাক।

ম্যাকাওল্যান্ডের পাশেই রয়েছে মেরিন অ্যাকুরিয়াম। ক্রোকোডাইল ফিস, টাইগার ফিস, ব্ল্যাক গোস, অস্কারের সঙ্গে প্রতি বিশ মিনিট পরপর রং পাল্টানো চিকলেট ফিস দেখা যাবে মেরিন অ্যাকুরিয়ামে। সাফারি কিংডমেই রয়েছে প্রজাপিত পার্ক, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, ফ্যান্সি কাপ গার্ডেন, জিরাফ ফিডিং স্পট, অর্কিড হাউজ, এগ ওয়ার্ল্ড, ক্যাঙ্গারু, হাতি শো গ্যালারি, শকুন ও পেঁচা কর্নার এবং লেক।

৩. বায়োডাইভার সিটি পার্ক
৮২০ একর আয়তনের এই সাফারিতে বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছের জীনপুল সংরক্ষণের উদ্যােগ নেয়া হয়েছে। পার্কটিকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান র‌্যাপলিকা হিসাবে স্থাপন করা হয়েছে।

৪. এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক
এ পার্কটির আয়তন ৭৬৯.০ একর। সকল এশীয় তৃনভোজী এবং ছোট মাংসাশী  প্রাণী, পাখি, সরিসৃপ ও উভচর প্রাণী নিয়ে এক্সটেনসিভ সাফারী পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি বন্য প্রাণীর আবাসস্থলের জন্য উপযোগী চারনভূমি, বনবাগান, জলাধার, অতিথি পাখির জন্য নির্মিত।

৫. বঙ্গবন্ধু স্কয়ার
সাফারি পার্রে প্রবেশ পথের পার্কিং এলাকা, বিনোদন উদ্যান এবং প্রশাসনিক ভবন নিযে নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। এখানে রয়েছে তথ্যকেন্দ্র, পার্ক অফিস, ডরমেটরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, বিশ্রামাগার, ইকো-রিসোর্ট, ম্যাপ প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে দুটি পর্যবেক্ষণ রেস্তোরা। দুটোতে বসেই খেতে খেতে কাঁচের মধ্যে দিয়ে সিংহ এবং বাঘ দেখা যায়।

সাফারি পার্কে ভ্রমন টিপস
× সাফারি পার্কে যাোয়ার জন্য খুব সকালে রোনা দেয়াই ভালো। এতে যাত্রাপথের ক্লান্তিকর ট্রাফিক জ্যাম এড়ানো সম্ভব।

× ঢাকা-ময়মনিসংহ সড়কের উন্নয়ন কাজ চলায় রাস্তায় বেশকিছু স্থানে ঝাঁকুনির ঝক্কি পোহােতে হতে পারে।

× সাফারি পার্কটি বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। তাই পুরো এলাকাটি ভালোভাবে দেখতে চাইলে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তাই হাঁটার উপযোগী জুতো পরে যাবেন। সঙ্গে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে ক্যাপ, সানগ্লাস অথবা ছোট ছাতা রাখা উত্তম।

× সাফারি পার্কে ঘুরতে ঘুরতে পানির তৃষ্ণা পাবেই তাই সঙ্গের ছোট ব্যাগে পানির বোতল, হালকা নাস্তা রাখা উচিত। পুরো পরিবার নিয়ে গেলে বাসা থেকে খাবার তৈরি করে নিয়ে যাওয়া ভালো। এতে সাফারি পার্কও দেখা হবে আবার শীতকালিন বনভোজনের আমেজটাও পাওয়া যাবে।

× সাফারি পার্ক বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। তাই প্রাণী ও পার্কটির ক্ষতি হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন : প্রাণীদের বিরক্ত করা, চিৎকার চেঁচামেচি করা, যেখানে সেখানে খাবারের উচ্ছিটাংশ, বোতল, চিপসের প্যাকেট ফেলা, অতি উৎসাহী হয়ে প্রাণীদের দিকে কোন খাবার ছুঁড়ে দেয়া।

অবস্থান
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।

প্রবেশ ফি
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পার্কের প্রবেশ টিকেট ৫০ টাকা। ১৮ বয়সের নিচের দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ ফি ২০ টাকা। তবে শিক্ষা সফরে আসা অথবা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বেলায় প্রবেশ টিকিটের মূল্য ১০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী গ্রুপ [৪০-১০০ জন] ৪০০ টাকা, [১০০ জনের বেশি] ৮০০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ ফি পাঁচ ইউএস ডলার। কোর সাফারিতে গাড়িতে করে ভ্রমনের জন্য বড়দের জন্য ১০০ টাকা আর ছোটদের জন্য ফি ৫০ টাকা। লেকে প্যাডেল বোটে ভ্রমনের জন্য ৩০ মিনিটের জন্য ফি নেওয়া হয় ২০০ টাকা। ক্রাউন্ড ফিজ্যান্ট এভিয়ারি, ধনেশ ও প্যারট এভিয়ারি পরিদর্শন ফি ১০ টাকা।

পার্কিং
বাস ২০০ টাকা। মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের পার্কিং ফি ১০০ টাকা। গাড়ি, জিপ, অটো এবং সিএনজির পার্কিং ফি ৬০ টাকা।  

কীভাবে যাবেন
নিজস্ব যানবাহন থাকলে তো কোন চিন্তাই নেই। ঢাকা থেকে শ্রীপুর অথবা মাওনাগামী বাসে চড়ে সরাসরি বাঘের বাজার নামতে পারেন। আরো সহজবুিদ্ধ হচ্ছে মহাখালী থেকে যে কোন ময়মনিসংহগামী বাসে চড়ে চলে আসতে পারেন বাঘের বাজার। তবে এক্ষেত্রে বিরতিহীন বাসের ক্ষেত্রে আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে ময়মনসিংহ পর্যন্তই।

এছাড়া ঢাকা থেকে গাজিপুরগামী বাসে চড়ে চলে আসতে পারেন গাজীপুর চৌরাস্তা। চৌরাস্তা থেকে হিউম্যান হলারে বাঘের বাজার যাওয়া যায়। বাঘের বাজারে নামলেই চোখে পড়বে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড। বাঘের বাজার থেকে রিকশা অথবা অটোতে পার্কের প্রবেশ গেট যাওয়া যায়।  

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন