বিমানের ‘Black Box’ রহস্য

ব্ল্যাকবক্স (Black box ) – নামটা শুনতেই কেমন যেন উদ্ভট লাগে!  জিনিসটা কি ?

আভিধানিকভাবে বলতে গেলে , এমন এক কালো বাক্স – যার ভেতরে কি আছে তা জানা যায় না ! ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে , ঐ বাক্সে  input দেয়া হলে বাক্স একটা output দিবে , কিন্তু কিভাবে output দিবে তা কেউ জানে না। বিমানের ব্ল্যাকবক্স নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। খুব কম মানুষের ধারণা আছে এটি নিয়ে।  

ব্ল্যাকবক্স কি ও কি কাজে ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি প্রশ্ন সবার মাথাতেই ঘুরে। আজ আমরা এ সম্পর্কে কিছু জানবোঃ

যুদ্ধবিমান, যাত্রীবাহী বিমান, মাল পরিবহন-বিমানসহ সব হেলিকপ্টারে ব্ল্যাকবক্স থাকে। তবে ব্ল্যাকবক্স কোন জাদুর বাক্স নয় , এটা একটা সাধারণ ইলেক্ট্রনিকাল ডিভাইস।      

black box
ছবি : সংগৃহীত

ব্ল্যাকবক্সকে সহজ ভাষায় ‘ ফ্লাইট রেকর্ডার ‘ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, একটি ফ্লাইটের সকল ধরনের তথ্য পাওয়া যায় এই বক্সে। ফ্লাইটের মধ্যবর্তী সময়ের কথোপকথন, ভিডিও এমনকি বিমানের গতিবিধি-সবকিছুই এতে জমা হয়ে যায় তাৎক্ষণিকভাবে।

নামে যদিও “ব্ল্যাক-বক্স”, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটির আসল রং হালকা কমলা ধরনের। রাতের বেলায় ব্লাক-বক্স সহজে চিহ্নিত করতে এর রঙ কমলা হয়ে থাকে। ব্ল্যাক বক্স এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যে উচ্চমাত্রার তাপ ও চাপ এর কোন ক্ষতি করতে পারে না। একটি ব্ল্যাকবক্সের প্রধান অংশ হচ্ছেঃ

– FDR  ( Flight Data Recorder ) – বিমানের উড্ডয়ন কালের যাবতীয় তথ্য রেকর্ডের ডিভাইস

  • – CVR  ( Cockpit Voice Recorder ) – উড্ডয়ন কালে ককপিটের সব রকম কথাবার্তা ও শব্দ রেকর্ডের ডিভাইস 

ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারে বিমানের ত্বরণ, গতি, উচ্চতা, বিমানের বাহিরের ও ভিতরের তাপমাত্রা ও চাপ, ইঞ্জিনের দক্ষতা সম্পর্কিত তথ্যসহ প্রায় ১০০ ধরনের তথ্য রেকর্ড করে। ককপিটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে মাইক্রোফোন বসানো থাকে যেগুলোর মাধ্যমে সব ধরনের শব্দ Cockpit voice recorder এ রেকর্ড হয়।

বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, কিংবা ক্র্যাশ করে পানিতে পড়ে গেলে ব্ল্যাকবক্স খুঁজে বের করার জন্যে Underwater Locator Beacon (ULB) ব্যবহার করা হয়।

একটি ব্ল্যাকবক্স অভিকর্ষের চাপের তুলনায় প্রায় ৩৪০০ গুন বেশি চাপ সহ্য করে থাকে। একটানা ৩০ মিনিট ১১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারে এটি। এমনকি প্রায় ২০,০০০ (বিশ হাজার) ফুট পানির নিচেও কাজ করে যায় এটি। পানির নিচে ৩০ দিনের মত এটি সচল থাকে।

বর্তমানে ‘ কুইক এক্সেল রেকর্ডার ‘ নামক ব্ল্যাকবক্সের একটি অংশ বিমানের হ্যান্ডলিং নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। 

বর্তমানে উড়োজাহাজ চালকেরা কিংবা তাদের সহকারীরা ব্ল্যাকবক্স চান না। কেননা তাদের ব্যক্তিগত বলতে কিছু থাকে না তখন। ককপিটের প্রতিটি শব্দ সাথে সাথে জমা হয়ে যায় ব্ল্যাকবক্সে। তাই বিমানে এই ব্ল্যাকবক্স কিছুটা লোক চক্ষুর অন্তরালে রাখা হয় এবং নাগালের বাহিরে রাখা হয়। ব্ল্যাকবক্স মূলত বিমানের ভিতরের অডিও এবং ভিডিও ধারণ করে , তাছাড়া বিমানের নিখুঁত অবতরণ সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করে।

দুর্ঘটনা কবলিত বিমান বা ছিনতাই হওয়া বিমানগুলোর তদন্তের কাজে ব্ল্যাকবক্স এর গুরুত্ব অপরিসীম। ব্ল্যাকবক্সে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ এসব তদন্তের কাজে অনেক সহায়তা করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন