মানুষ কেন তোতলায় ?

স্কুল জীবনের প্রথম দিনটাকে আমরা সবাই মনে রাখি। অনেক আশা অনেক প্রত্যাশা থাকে দিনটি নিয়ে যেমন তা ছিল রানুর। নতুন ব্যাগ নতুন ড্রেস নতুন ফ্লাক্স আর টিফিন বক্স, আর একরাশ নতুন স্বপ্ন। নতুন বন্ধু হবে লেখাপড়া শুরু হবে মানুষ হিসেবে নিজেকে একধাপ আগানোর স্বপ্নে বিভোর রানু। কিন্তু স্বপ্নটা বুনতে যতোটা সময় লেগেছিল তা ভাঙতে মাত্র কিছুটা মিনিট লেগেছিল তার কারণ ছিল রানু একটা শব্দ বলতে অনেক সময় নেয়। অর্থাৎ, রানু সাবলীল ভাবে কথা বলতে পারতো না। কথা বলার সময় খানিকটা তোতলাতো ও।   

তোতলামি করাটা এক ধরনের রোগ। এই রোগের পিছনে অনেকগুলো কারণ চিন্তা করা হয়েছে। মানুষের কথা বলা নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের বেশ কয়েকটি অংশ দিয়ে। তোতলামি বা Stuttering-এর পিছনে মস্তিষ্কের কোন অংশ কাজ করছে সেটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কেউ বলছেন যারা তোতলায় তাদের মস্তিষ্কের সামনের নিচের দিকের অংশে কর্মদক্ষতা কমে যায়। মস্তিষ্কের এই অংশকে Broca's area বলা হয় এবং যেটা মানুষের কথা বলতে সহায়তা করে।আবার কেউ বলছেন মস্তিষ্কের Right Frontal Operculum নামক জায়গায় অস্বাভাবিক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়। তবে মূলত দেখা গেছে কথা বলার সময় ব্রেইনের বিভিন্ন অংশগুলো যেই ক্রমে কাজ করে, তোতলামোর সময় সেই ক্রমটা একটু ওলটপালট হয়ে যায়।

তোতলামি রোগটা শিশু থেকে বড় হওয়ার সময় হতে পারে। যাকে বলা হয় Developmental Disorder। এছাড়া, তোতলামির জন্য মানুষের জিনও দায়ী। বেশীর ভাগ মানুষ জেনেটিক কারনে এই সমস্যায় পড়েন।

তোতলামি বা কথা বলার প্রতিবন্ধকতা এমন একটি শারীরিক ব্যাধি যার কারণে কিছু মানুষ একই শব্দকে বার বার বলে, অনেক সময় একটা শব্দকে টেনে অনেক লম্বা করে বলতে থাকে এবং অনিচ্ছাকৃত এই সমস্যার কারণে কথা বলার স্বাভাবিক গতি ব্যহত হয়৷

তোতলামির সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের জিনে GNPTAB নামে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ এছাড়া, অন্য গবেষণার ফলাফল বলছে যাদের তোতলামির সমস্যা রয়েছে তাদের জিনে GNPTAB নামক Mutation তো আছেই বরং একইসঙ্গে এমন আরও দু'টি Mutation আছে৷ এগুলো হল GNPTAG এবং NAGPA

তোতলামি শুধু নিউরোলজিক্যাল কারনেই নয় বরং মানসিক কারনেই অনেক সময় হতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে যে মানসিক চাপে থাকলে তোতলামি সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এছাড়া, রেগে গেলে বা জলদি কথা বলতে গেলে মানুষ তোতলায়। এমন মানুষ ও আছে যারা ঘুমের মধ্যে তোতলায়।  

তবে তোতলামি কারও জীবনে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। বিজ্ঞানী নিউটন, গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল এবং ব্রিটিশ লেখক জর্জ বার্নার্ডশ' এর মতো বিশ্ববিখ্যাত লোকেরা তোতলামি সমস্যা থাকা সত্ত্বেও জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন। এমনকি গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতা কলম্বিয়ার তারকা জেমস রদ্রিগেজ বা গলফ তারকা টাইগার উডসের তোতলামি সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।    

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন