লিফটের বাটন যেভাবে কাজ করে

একতলা থেকে ৭ তলা বা ১০ তলায় যাবে, লিফটের ভেতর ঢুকেই ৭ লেখা বাটনে চাপ দিলে, আর ওমনি লিফট চলা শুরু হয়ে গেলো। উঠছে তো উঠছেই, একদম ঠিক ৭ তলায় এসেই থামলো। কিন্তু, আসলে কীভাবে এই পুরো ব্যাপারটা ঘটে কখনো ভেবে দেখেছো? কেন লিফট ৭ তলায় না গিয়ে ৯ তলায় বা ১০ তলায় গেলো না? বাটনটা আসলে কীভাবে লিফটকে নির্দেশনা দেয়? এসো, আজ আমরা এসব নিয়েই আলোচনা করি।

লিফট পুরোটা তৈরি হয় ষ্টীল দিয়ে এবং এটি উঠানামা করাতে একটি বিশাল কপিকল ব্যবহার করা হয়। কপিকলটি কাজ করে একটি ইলেকট্রিক মোটর দিয়ে। লিফট ঝুলানো থাকে ইয়া মোটা একটি ষ্টীলের রশি দিয়ে। ভেবে দেখোতো, রশিটি যদি একবার ছিঁড়ে যায়, তাহলে কি হবে! ভয় পাবার তেমন কিছু নেই, লিফটের রশি এতই শক্ত হয় যে এটি ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও লিফট ছিঁড়ে পড়ে যাবার ঘটনা যে ঘটে না, তা নয়। তবে এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে খুবই স্বল্পসংখ্যক।

লিফটের ভেতর একটি কম্পিউটার সেন্সর স্থাপিত থাকে, এই সেন্সরই আসলে লিফটের চালিকাশক্তি। লিফট ডাকার জন্য যে বাটন থাকে, তাতে চাপ দিলে সেন্সরে খবর পৌঁছে যায় এবং লিফট বুঝতে পারে যে তাকে কোন তলা থেকে ডাকা হচ্ছে। তবে সেন্সর অনুযায়ী এর কাজ করার ব্যাপারটা যথেষ্টই জটিল। লিফট ডাকার দু’টি বাটন থাকে এবং এ অনুসারে লিফট দু’টি পর্যায়ে কাজ করে। কখনো কখনো দেখবে যে তুমি ৭ তলায় দাঁড়িয়ে নিচে নামার জন্য বাটনে চাপ দিলে, কিন্তু লিফট উপরে উঠতে উঠতে ৭ তলায় না থেমে সোজা ১০ তলায় গিয়ে নিচে নামার সময় ৭ তলায় থামল। এর মানে হল লিফট ৭ তলায় আসার আগে ১০ তলায় কেউ একজন বাটনে চাপ দিয়েছে, আর যেহেতু তুমিও নিচে যাবে, তাই ৭ তলায় থেমে সময় নষ্ট না করে ১০ তলায় গিয়ে একেবারে নামার সময় ৭ তলায় থামল। ব্যাপারটা একটু মজার, তাই না? যেন লিফটেরও মানুষের মতো সময়জ্ঞান আছে!

এ তো গেলো লিফট ডাকার কথা, এবার চলো লিফটে ওঠা যাক। লিফটে প্রবেশ করার পরপরই দেখবে দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু লিফট কীভাবে জানে যে তুমি প্রবেশ করেছো কিনা? আসলে লিফটের দরজাতেও একটি ছোট সেন্সর বসানো থাকে, যেটি বুঝতে পারে দরজার মাঝে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা। যদিও এই সেন্সরটি তেমন শক্তিশালী না, তাই মাঝেমধ্যেই অনেকে লিফটে ঢুকতে দেরী করে দরজাতে ছোটোখাটো একটা চাপা খেয়ে থাকেন। লিফটে প্রবেশ করার পর ভেতরে অনেকগুলো বাটন দেখা যায়। লিফটটি যে বিল্ডিং-এ আছে, সেই বিন্ডিং-এর যতগুলো ফ্লোর, ততগুলো নাম্বার বাটন থাকে। তুমি যদি G-তে চাপ দাও, তার মানে তুমি একদম গ্রাউন্ড ফ্লোরে যেতে চাইছো, তখন লিফটের সেন্সর এই নির্দেশনা গ্রহণ করে এবং মোটরকে চালিত করে। গ্রাউণ্ড ফ্লোরে পৌঁছানোর পর সেন্সর বুঝতে পারে যে গন্তব্যে পৌঁছানো হয়েছে। ফ্লোর বাটনগুলোর পাশাপাশি লিফটে আরও কিছু বাটন দেখতে পাবে। এর মধ্যে ফ্যান, স্টপ ছাড়াও অ্যালার্ম লেখা একটি বাটন আছে। কোন কারণে হঠাৎ লিফট বন্ধ হয়ে গেলে বা কারেন্ট চলে গেলে এই বাটনে চাপ দিলেই নিচে লিফট কন্ট্রোল রুমে খবর পৌঁছে যায় যে লিফট আটকা পড়েছে। তখন তাঁরা চাবি দিয়ে লিফট খোলার ব্যবস্থা করেন। তাই কখনো লিফটে আটকা পড়লে অযথা আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার না করে অ্যালার্ম বাটন খুঁজে নিয়ে তাতে চাপ দেবে।

বাসাবাড়িতে থাকা লিফটগুলো নিয়ে অনেক সময় অনেক দুষ্ট বাচ্চারা খেলা করে। অযথা লিফট ডাকার বাটনে চাপ দিয়ে অন্যদের সময় নষ্ট করে, বা শুধু শুধু অ্যালার্ম বাটনে চাপ দিয়ে সবাইকে হয়রানির শিকার করে। আসলে এসব একদমই করা উচিত নয়। লিফট অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জিনিস, বিশেষ করে বহুতল ভবনের জন্য। তাদের দুষ্টুমির জন্য হয়তো অনেকের চলাচলে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে। আর অনেকে লিফট ডাকার বাটনে বারবার চাপ দেন এটা ভেবে যে লিফট হয়তো তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আসলে এটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। লিফটকে যে কমান্ডগুলো দেয়া হয়, সে সেই অনুসারেই কাজ করে। একটি কমান্ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য একটি কমান্ড পূরণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাটনে একবার চাপ দিয়ে ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করবে, এবং আগে লিফট থেকে লোকজনকে নামতে দিয়ে ধাক্কাধাক্কি না করে ধীরেসুস্থে প্রবেশ করবে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন