স্কুলের প্রথম দিনটা

সন্তানের স্কুলের প্রথম দিনটি নিয়ে সন্তান যেমন উচ্ছ্বসিত ও ভীত থাকে তেমনি অভিভাবকরাও কম উৎকন্ঠায় থাকেন না। সন্তানের প্রথম স্কুলে যাওয়া, ক্লাসরুমে মানিয়ে নেয়া, নতুন বন্ধু বানানোর ব্যাপারগুলো নিয়ে বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা থাকাটাই স্বাভাবিক।

সন্তান প্রথম স্কুলে যাচ্ছে এমন অভিভাবকদের জন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হাজেরা খাতুন চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ানকে জানান, 'অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে, নতুন স্কুল নতুন পরিবেশ নিয়ে তার সন্তানের মনে এমনিতেই অনেক বেশি ভয় কাজ করে, সেখানে সে নিজের বাবা-মাকে দুশ্চিন্তা করতে দেখলে আরও ঘাবড়ে যাবে। সন্তানের সামনে বাবা-মাকে খুবই নিশ্চিন্ত মনে থাকতে হবে, যেন তার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে ওঠে'।

সন্তান যেন স্কুলে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তার জন্য অভিভাবকদের করণীয় পরামর্শ হচ্ছে:
প্রথম দিন স্কুলে যেয়ে অচেনা পরিবেশে, অচেনা মানুষের মধ্যে যেন শিশুর মনে ভয় কাজ না করে, সেজন্য সবসময় সন্তানের সামনে স্কুল কেমন, স্কুলে কী কী করতে হয়, স্কুল কতোটা গুরুত্বপূর্ণ এবং স্কুল জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এ বিষয়গুলো গল্পোচ্ছলে সন্তানকে বোঝাতে হবে।

সন্তান যে স্কুলে ভর্তি হয়েছে সে স্কুলের শিক্ষকরা, শিক্ষার্থীরা সবাই অনেক ভালো তা তাকে আগেভাাগে জানিয়ে দিন।

প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে ভয় পেয়ে যেন কান্নাকাটি না করে, সেজন্য ক্লাস শুরুর আগেই সন্তানকে নিয়ে বেশ কয়েকবার স্কুলটি ঘুরে আসতে পারেন। আগে থেকে স্কুল ঘুরে আসলে স্থানটি নিয়ে তার অহেতুক ভীতি দূর হয়। পাশাপাশি আপনার সন্তান অন্যান্য বাচ্চাদের সেখানে খেলাধুলা, পড়াশুনা করতে দেখলে বুঝতে পারবে যে তারও একই কাজ করতে হবে।

ক্লাসটিচারের সাথে ক্লাস শুরু আগেই সন্তানের পরিচয় করিয়ে দিন, যেন প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে সে নিজেকে নিরাপদ বোধ করে। টিচারকে জানিয়ে দিন আপনার সন্তানের পছন্দ, অপছন্দ, ভয়ের কথা।

বাচ্চাটি কী কী খেলা খেলতে পছন্দ করে, তার পছন্দের রঙ কী, কোন খাবারটি তার প্রিয় সবকিছু শিক্ষককে জানিয়ে দিন। এতে শিক্ষক আপনার সন্তানের সঙ্গে সহজ যোগাযােগ স্থাপন করতে পারবে ।

বাচ্চারা প্রথম দিন স্কুলে যেতে ভয় পেলে, সেই ভয়টিকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।

এ বিষয়ে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল ও কলেজের শিক্ষিকা হোসনে আরা আহমেদ বলেন, 'স্কুলের প্রথম দিনটি আপনার সন্তানকে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে বেরিয়ে আসুন। খুব অল্প সময়ে বিদায় নিন। বেশিক্ষন সন্তানের সাথে থাকলে সে আরও কিছুক্ষন আপনাকে নিজের সাথে রাখতে চাইবে এবং একটা পর্যায়ে সে আপনাকে যেতে দিতে চাইবে না এবং বিদায়ের সময় অবশ্যই তাকে জানাবেন যে ছুটির সময় আপনি তাকে নিতে আসবেন। তাকে বলুন যদি সে লক্ষ্মী হয়ে ক্লাস করে তবে বাসায় ফেরার পথে কোন জায়গায় ঘুরতে যেতে চাইলে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।'

আপনার সন্তান যদি প্রথম দিন ক্লাসে যাওয়ার পর কাঁদা শুরু করে, তার কান্না থামানোর জন্য কখনই অন্যদের উদাহরন টানবেন না। যেমন 'তোমার বন্ধুরা তো কাঁদছে না, তুমি কাঁদছ কেন?' এ ধরণের কথা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন না। এর ফলে প্রথম থেকেই আপনার সন্তান হীনমন্যতায় ভুগবে। তার মনে হবে সে তার বন্ধুদের চেয়ে দুর্বল ও ভীতু।

৪-৫ বছরের কিছু কিছু বাচ্চার সর্বােচ্চ ১০ সপ্তাহের মত সময় লাগে বাবা-মাকে ছেড়ে একা পুরাপুরি স্কুলে এসে সেখানে স্বাভাবিক হয়ে ক্লাস করতে আবার কিছু কিছু বাচ্চা মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে ও সর্বক্ষণ বাচ্চাকে স্কুলের গুরুত্ব বুঝাতে হবে।

আপনার সন্তানকে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর সে কী করছে, ঠিক আছে নাকি কাঁদছে তা দেখার জন্য ঘনঘন তাকে দেখতে না যাওয়াটাই শ্রেয়। এতে করে আপনার সন্তান আপনার প্রতি তার নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। সে সবসময় আপনাকে নিজের কাছে চাইবে এবং পরনির্ভরশীল হতে শুরু করবে।

৪-৫ বছরের শিশুরা পুরাপুরি নিজের ব্লাডার নিয়ন্ত্রন করতে পারে না, যা খুবই স্বাভাবিক। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বাবা-মায়েরা দুশ্চিন্তা করেন। সে ক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে বারবার বুঝিয়ে বলুন, কখনো তার বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন মনে হলে সে যেন লজ্জা না পেয়ে অবশ্যই তার টিচারকে ব্যাপারটি জানায়। তাকে এটাও বুঝিয়ে দিন কখনো যদি দুর্ঘটনাবশত সে তার কাপড় নোংরা করে ফেলে, সেক্ষেত্রে নিজেকে দোষী না মনে করতে। শিক্ষক সবসময় তার সাহায্য করবে এই ব্যাপারটি তাকে নিশ্চিত করুন।

আপনার সন্তানকে নতুন বন্ধু বানানোর ব্যাপারে অনেক বেশী উৎসাহী করুন। প্রথম দিনই যেন সে বেশ কয়েকটি বন্ধু বানিয়ে ফেলে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিন। ক্লাসে একবার বন্ধু হয়ে গেলে শিশুর স্কুল ভীতি সম্পূর্ণ কেটে যাবে। আপনি কিভাবে আপনার স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে বন্ধু বানিয়েছেন সেইসব গল্প তাকে আগে থেকে শুনিয়ে রাখুন। জীবনে বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা তাকে বুঝিয়ে দিন। বন্ধুদের সাথে টিফিন, খেলনা, পেন্সিল রাবার শেয়ার করার মনোভাব তার মধ্যে গড়ে তুলুন।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন