হাওয়াই মিঠাইয়ের ইতিহাস

হাওয়াই মিঠাই আমাদের সবারই কম বেশি প্রিয়। মজাদার এ খাবারটি আমাদের দেশে যেকোনো পার্ক বা মেলায় গেলেই পাওয়া যায়। যদিও হাওয়াই মিঠাই চিনি দিয়ে তৈরি কিন্তু এতে ক্যালরি থাকে খুব কম। এক আউন্স হাওয়াই মিঠাইয়ে মাত্র ১০৫ ক্যালরি থাকে।

হাওয়াই মিঠাই একপ্রকার মিষ্টি জাতীয় খাদ্যবিশেষ। এটি মুখে দিলে দ্রুত মিলিয়ে যায় বলে এর নাম রাখা হয়েছে ‘হাওয়াই মিঠাই’। কাঠির মাথায় যেন এক টুকরো গোলাপি কিংবা সাদ রঙের মেঘ। কোথাও বেড়াতে গেলে প্রায় সব ছোটরা এমনকী বড়রাও এই কাঠির মাথায় এক টুকরো মেঘ খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

বর্তমান সময়ে যে ধরণের হাওয়াই মিঠাই আমরা দেখি সেটির উদ্ভাবক উইলিয়াম মরিসন। জন ওয়ার্টন নামের একজন মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকের সহায়তা নেন তিনি। ১৮৯৭ সালে এই দুজন মিলে একটি বৈদ্যুতিক হাওয়াই মিঠাই মেশিন তৈরি করেন। এই মেশিনে একটি ধাতব পাত্রের মাঝখানে এই ঘূর্ণনশীল অংশ থাকে। এটির উপর দিয়ে চিনির গুড়া দেয়া যায় এবং চারপাশে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে।

এখনকার সময়ের হাওয়াই মিঠাই যন্ত্রগুলোর মতই কাজ করতো এটি। মাঝখানের অংশটি চিনির গুড়াকে উত্তাপ দিয়ে গলিয়ে সিরাপে পরিণত করে। একইসাথে সেটি দ্রুতগতিতে ঘুরে এই সিরাপকে ছিদ্রগুলোর ভেতর দিয়ে চারপাশের পাত্রের দেয়ালে ছুঁড়ে মারে। ফলে অত্যন্ত সরু চিনির সুতার তৈরি হয়। চিনির এই সুতাগুলো ৫০ মাইক্রন (১ ইঞ্চির ২ হাজার ভাগের এক ভাগ) হয়ে থাকে। খুব দ্রুত এই সুতাগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার কারণে সেগুলো শক্ত থাকে না বরং নরম ও মোলায়েম হয়।

মরিসন এবং ওয়ার্টন প্রথম তাদের হাওয়াই মিঠাই যন্ত্র জনসম্মুখে আনেন ১৯০৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস ওয়ার্ল্ডস ফেয়ারে তারা তাদের হাওয়াই মিঠাইয়ের দোকান নিয়ে বসেন। এই মেলায় তারা প্রায় ৭০ হাজার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন।

হাওয়াই মিঠাইয়ের ইংরেজি নাম ‘কটন ক্যান্ডি’ সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন জোসেফ ল্যাসকক্স নামের একজন মার্কিন দন্ত চিকিৎসক। তিনি মরিসন এবং ওয়ার্টনের হাওয়াই মিঠাই যন্ত্রটিকে আরও উন্নত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। ১৯৪৯ সালে গোল্ড মেডেল প্রোডাক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান উন্নত যন্ত্র নিয়ে আসে। এখনো পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হাওয়াই মিঠাই যন্ত্র তৈরি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭ ডিসেম্বর দিনটি ‘জাতীয় কটন ক্যান্ডি ডে’ হিসাবে পালন করা হয়।

Cotton Candy
ছবি : সংগৃহীত

তবে হাওয়াই মিঠাই আধুনিক যুগের খাবার নয়। ১৫শ শতকেও হাওয়াই মিঠাইয়ের চল ছিল। সেসময় একজন ইতালীয় রাঁধুনি চিনির সিরাকে কাঁটা চামচ দিয়ে টেনে সুতার মত তৈরি করে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করতো।

১৬শ শতকে ফ্রান্সের সম্রাট ৩য় হ্যানরিকে ভেনিস ভ্রমণের সময় বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন  দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় যেখানে চিনির পেঁচানো সুতাও ছিল। ১৯শ শতকেও চিনির সুতার তৈরি জাল দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টিকে সাজানো হতো। সেসময় হাওয়াই মিঠাই যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি বলে ছুরির বা কাঁটা চামচের মাথায় চিনির সিরা লাগিয়ে টেনে পেঁচিয়ে চিনির সুতা তৈরি করা হতো।

এখন হাওয়াই মিঠাই শুধু তৈরি করাই সহজ নয়, দামেও সস্তা। একটি হাওয়াই মিঠাইয়ে এক ক্যান কোকের চাইতে কম চিনি থাকে। তাই এটি খাওয়া নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন