দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১তম আসর। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এ আসর মাঠে গড়ানোর বাকি আর মাত্র ২দিন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুতে গড়াচ্ছে বিশ্ব সেরার লড়াই। এবার এতে অংশ নিচ্ছে ১৪টি দল। বিশ্বকাপের এই দলগুলোর ধারাবাহিক পরিচিতির ১১তম পর্বে আজ থাকছে শ্রীলঙ্কা।
১৯৭৫ থেকেই বিশ্বকাপে অংশ নেয় শ্রীলঙ্কা। ১৯৮১ সালে তারা টেস্ট স্ট্যাটাস পায়। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৫ বছরের মধ্যেই বিশ্বকাপ জিতে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয়। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জেতার আগে ১৯৭৫-১৯৯২ পর্যন্ত হওয়া ৫ টি বিশ্বকাপের আসরে অংশ নিয়ে ২৬ ম্যাচে ৪টিতে জয় পায় লঙ্কানরা।
কোচ ডেভ হোয়াটমোরের জাদুকরী হাতের ছোঁয়ায় সম্পূর্ণ পাল্টে যায় শ্রীলঙ্কা। আনকোরা একটি দল নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মর্যাদাপ্রাপ্তিতে শ্রীলঙ্কা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। অরবিন্দ ডি সিলভা ও টুর্নামেন্ট সেরা সনাৎ জয়সুরিয়ার কল্যাণে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। শ্রীলংকাই একমাত্র দল যারা আইসিসি ট্রফি ও বিশ্ব কাপ ট্রফি দুটোই জিতেছে।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শ্রীলঙ্কা দলকে। ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত হয় দলটি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডেই বাদ পরে তারা। ২০০৩ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা ।
২০০৭ ও ২০১১ পর পর দুই বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয়। এবার তবে কী আছে তাদের ভাগ্যে? শ্রীলঙ্কা এ পর্যন্ত ১০টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে মোট খেলেছে ৬৬টি ম্যাচ, জিতেছে ৩১টি, হেরেছে ৩২টি, ১টি টাই এবং ২ টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা ও অলরাউন্ডার দিলশান এখন ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসও যেকোন মুহূর্তে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেন। শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনআপ বরাবরই বৈচিত্র্যময়। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৪ বলে ৪ উইকেট নেয়া লাসিথ মালিঙ্গা রয়েছেন দলে।
তার সাথে নুয়ান কুলাসেকারা, সুরাঙ্গা লাকমাল, দুশমন্ত চামিরা, থিসারা পেরেরা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস তো রয়েছেনই। স্পিনে মুরালিধরনকে ছাড়াই এবার বিশ্বকাপে মাঠে নামছে শ্রীলঙ্কা। তবে বাঁহাতি রঙ্গনা হেরাথের সাথে শাচিত্রা সেনানায়েকে, তিলকারত্নে দিলশান ও জীবন মেন্ডিস বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন।
তবে সম্প্রতি ভারত ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরে কিছুটা চাপে আছে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংঙ্কিয়ে ৪ নম্বরধারী লঙ্কানরা। এছাড়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে সেই চাপটা আরও বাড়িয়ে তুলেছে তারা। অভিজ্ঞতায় এগিযে় এবারের বিশ্বকাপে সবচেযে় অভিজ্ঞ দলের মর্যাদা পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
তিন শতাধিক ওডিআই খেলার অভিজ্ঞতা নিযে় আসন্ন আসরে নামছেন মাত্র চারজন ক্রিকেটার। এর তিনজনই শ্রীলঙ্কার। চলতি বছরের ১৪ জানুযা়রি পর্যন্ত সর্বাধিক ৪৩৪ ওযা়নডে খেলার মর্যাদা মাহেলা জয়াবর্ধনের। কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকারত্নে দিলশানের সঙ্গে ৩০০ ওযা়নডের অপর তারকা পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদী। ত্রিশোর্ধ গড় (৩১.০৭ বছর) নিযে় এবার সিনিয়র দলের তালিকায় ২য় অবস্থানে ১৯৯৬’র চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার।
গ্রুপ-এ’ তে শ্রীলঙ্কা লড়বে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের সাথে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ১৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে লঙ্কানরা।
এক নজের শ্রীলঙ্কা দল
বিশ্বকাপে অংশগ্রহন: ১৯৭৫ থেকে সবগুলো।
সেরা সাফল্য: ১৯৯৬ তে বিশ্বকাপ জয়।
কোচ: মারভান আতাপাত্তু (শ্রীলঙ্কা)।
এবারের বিশ্বকাপ দল: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস (অধিনায়ক), তিলকারত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, লাহিরু থিরিমান্নে (সহ-অধিনায়ক), জীবন মেন্ডিস, দিনেশ চান্দিমাল, দিমুথ করুনারত্নে, থিসারা পেরেরা, সুরাঙ্গা লাকমাল, দুশমন্ত চামিরা, শাচিত্রা সেনানায়েকে, লাসিথ মালিঙ্গা, নুয়ান কুলাসেকারা, রঙ্গনা হেরাথ।
যিনি নজর কাড়তে পারেন: কুমার সাঙ্গাকারা।
বিশ্বকাপ মিস করছেন এমন তারকা: শামিন্দা এরাঙ্গা, ধাম্মিকা প্রসাদ।
শেষ বিশ্বকাপ: কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে।