আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো আফ্রিকার জাতিগোষ্ঠী ‘হুতু’ সম্পর্কে।
হুতু মধ্য আফ্রিকায় বসবাস করা একটি জাতিগোষ্ঠী। এরা প্রধানত রুয়ান্ডায় এবং কিছু সংখ্যক বুরুন্ডি ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলে বাস করে।
হুতুদের আবাহুতু নামেও ডাকা হয়ে থাকে। আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে বসবাসকারী সবচেয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হুতু। রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডির যথাক্রমে ৮৪% এবং ৮৫% নাগরিক হুতু। বাকিদের মধ্যে বেশীরভাগই তুতসি জনগোষ্ঠী এবং অল্প কিছু রয়েছে টুয়া জনগোষ্ঠী।
হুতুদের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে বেশীরভাগের মতেই আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী বান্টুদের থেকে একদল জাতিগোষ্ঠী আলাদা হয়ে মধ্য আফ্রিকার লেক অঞ্চলে বসবাস শুরু করে যারা পরে হুতু হিসেবে পরিচিতি পায়।
হুতুরা রুয়ান্ডা-রুন্ডি ভাষায় কথা বলে। এটিই এদের আদি-ভাষা। তবে অনেক হুতুই ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলতে পারে।
গত ১০০ বছরে হুতু এবং তুতসিদের মধ্যে অনেকগুলো সংঘর্ষ, গণহত্যা এবং উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস হচ্ছে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত রুয়ান্ডা জেনোসাইড যেখানে প্রায় ৮ লাখ তুতসি হত্যা করে হুতুরা। এরপর থেকে রুয়ান্ডাতে ক্ষমতায় রয়েছে হুতুরা। পাশের দেশ বুরুন্ডিতেও ক্ষমতাসীন দল হুতুদের।
রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে ২০০৪ সালে হলিউডে নির্মাণ করা হয় সাড়া জাগানো সিনেমা ‘Hotel Rwanda’। এছাড়া ‘Sometimes in April’ নামেও আরেকটি চলচ্চিত্র রয়েছে রুয়ান্ডার এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে। এসব চলচ্চিত্র থেকে হুতু এবং তুতসিদের অনেক ঘটনা এবং ইতিহাস জানা যায়।