অরোরা বা মেরুজ্যোতির নাম আমরা হয়তোবা শুনেছি বা না তবে অরোরা কিভাবে সৃষ্টি হয় তার রহস্য আমাদের অনেকেরই জানা নেই। চলো আজ জেনে নেয়া যাক অরোরা সৃষ্টির গল্পটি।
অরোরা হলো মেরু অঞ্চলের আকাশে দৃশ্যমান অত্যন্ত সুন্দর ও অপূর্ব আলো যা পূর্বে ভৌতিক ব্যাপার বলে মনে করা হতো। তবে আধুনিক যুগে অরোরা অন্য যেকোন প্রাকৃতিক ঘটনার মতোই।
বায়ুমণ্ডল যে সমস্ত উপাদানে গঠিত তাদের প্রকৃতি ও উষ্ণতার পার্থক্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে ছয়টি স্তর অবস্থিত। ট্রপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল, তাপমন্ডল, এক্সোমণ্ডল ও চৌম্বকমণ্ডল।
বায়ুমন্ডলের তাপমন্ডলে (Thermosphere) থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে চৌম্বকমণ্ডল (Magnetosphere) থেকে আসা চার্জিত কণিকাসমূহের ( মূলত ইলেকট্রন, কিছু ক্ষেত্রে প্রোটন) এর সংঘর্ষের ফলেই অরোরা তৈরী হয়। সংঘর্ষের কারণে পরমাণু বা অণুসমূহ কিছু শক্তি লাভ করে চার্জিত কণিকাসমূহের কাছ থেকে। পরমাণু ও অণু সমূহের এই শক্তি অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে। এসব অভ্যন্তরীণ শক্তি যখন আলোকশক্তি হিসেবে বিকরিত হয়, তখনই মেরু অঞ্চলের আকাশে আলোর প্রভা দেখা যায় ।
আমরা জানি, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বরাবর অবস্থান করে। আর ইলেকট্রন সাধারণত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র বরাবর পরিভ্রমন করায় শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলেই অরোরা দৃশ্যমান হয়। অরোরা বিভিন্ন রঙের হতে পারে। মেরুপ্রভার রঙ নির্ভর করে গ্যাসীয় পরমাণুর ইলেকট্রনের ধর্মের উপর।
অরোরার সবচেয়ে পরিচিত রঙ হলো সবুজাভ-হলুদ। অক্সিজেন পরমাণুর কারণে এই রঙ দেখা যায়। নাইট্রোজেন সাধারণত একটি নীল রঙের আলো দেয়। এছাড়া, অক্সিজেন এবং নাইট্রজেন পরমাণু অতি-বেগুনী রশ্মি (Ultra-violet Ray) নির্গত করে। যা খালি চোখে দেখা যায় না তবে স্যাটেলাইটের ক্যামেরার সাহায্যে দেখা যায়। মেরুপ্রভা সূর্যালোক থেকে অনেক ক্ষীণ বলে তা পৃথিবী থেকে দিনের বেলায় দেখা যায় না। রাতের বেলা এই সুন্দর আলো মেরুর আকাশে দেখা যায়।
উত্তর অক্ষাংশে অরোরা সুমেরুপ্রভা (The Northern Light) নামে পরিচিত এবং দক্ষিণ অক্ষাংশে একে বলা হয় কুমেরুপ্রভা (The Southern Light)।