খেলার মাঠে উন্মাদনাঃ পর্ব ১

বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার সময় সবসময় একজন মানুষকে সবার চোখে পড়ে। পাগলের মত গ্যালারির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে দৌড়াতে থাকে, পুরো শরীরে বাঘের মত ডোরাকাটা দাগ আঁকা মানুষটা প্রতিটি খেলায় সাপোর্ট করে যায় টাইগারদের। শুধু বাংলাদেশেই না, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই এরকম কয়েকজন সাপোর্টার থাকেন, যারা সবকিছু উজাড় করে দিয়ে মাঠে থাকা এগারো জনকে আত্মবিশ্বাস জোগান দিয়ে থাকেন। খেলার জন্যে, খেলার মাঠে অনেক কিছুই হয়। যা ক্রীড়াঙ্গনে নতুন আঙ্গিক এনেছে।

আজকে সেরকম কিছুই আমরা দেখে নেইঃ

পুরো শরীর রং মেখে আসাঃ  

আগের দিনে দেখা যেতো শুধু মুখ বা হাতে হালকা কিছু আল্পনা এঁকে আসতো দর্শকেরা। এই প্রথা এখনো চলছে। কিন্তু কয়েকজন দর্শক আছেন যারা শুধু মুখ বা হাত রাঙিয়েই সন্তুষ্ট না। তাঁরা তাদের পুরো শরীরে আঁকিয়ে নেন প্রিয় দেশের, প্রিয় খেলোয়াড়ের জন্যে নকশা।

বাংলাদেশের শোয়েব আলি বুখারি কিংবা ভারতের বিখ্যাত সুধীর কুমার চৌধুরী- একজন পুরো শরীরে বাঘের রঙের উল্কি এঁকে আসেন, আরেকজন লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকারের নামসহ ভারতের পতাকা এঁকে আসেন পুরো শরীরে। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলেও এরকম উল্কি, ছবি, পতাকা এঁকে মাঠে আশার দৃশ্য এখন অনেক দেখা যায়। 

গান গাওয়াঃ

গ্যালারি থেকে মুহুর্মুহু চিৎকারে দর্শকদের গান গাওয়া পুরনো একটি অভ্যাস। ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত বনাম দক্ষিন আফ্রিকার ম্যাচ, যা মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়; এ ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীতের সময় ৯০ হাজার দর্শকের মধ্যে প্রায় ৫০-৬০ হাজার ভারতীয় দর্শক একত্রে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উঠে। আবার জাতীয় সঙ্গীত শুরুর আগে বাজতে থাকা আগে “Conquest of paradise”গানটি যোগ করেছে নতুন মাত্রা।  

তবে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল মাঠে গান গাওয়া অনেক বেশী জনপ্রিয়। জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি সবগুলো ক্লাবের খেলায় তাদের দর্শকেরা পুরো ৯০ মিনিট ধরে গাইতে থাকে তাদের থিম সং।  ইংল্যান্ড কিংবা স্পেনের হেভিওয়েট ক্লাব ফুটবল ম্যাচগুলাতে মাঠের সীমানার বাইরের খেলোয়াড় হিসেবে দর্শকেরা একটানা গান গেয়ে গেয়ে মাতিয়ে রাখে পুরো গ্যালারি। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থিম সং হলো “Glory Glory Man United”, আবার স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার থিম সং “El Cant del Barça.

        

নেচে নেচে উদযাপন করাঃ

২০১২ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ের পর চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরো মাঠে Gangnam Style গানের তালে তালে নেচেছিলো। ক্রিকেটে এতো বড় পরিসরে আর নাচার কোনো নমুনা আগে কখনো দেখা যায় নি।

শুধু যে খেলার মাঠে খেলোয়াড়রা নেচে গেয়ে জয় উদযাপন করে তা কিন্তু নয়, দলের ড্রেসিংরুমেও তারা জয় উদযাপন করা থাকে। যেমনঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ড্রেসিংরুমে "আমরা করবো জয়" এই গানের সাথে নেচে গেয়ে দলের জয় উদযাপন করে থাকে। ২০১০-২০১১ অ্যাশেজ সিরিজ জয়ের পরে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের Sprinkler Dance ও মানুষের নজরে আসে।     

ওয়েভঃ

খেলার মাঠের সবচেয়ে চমকপ্রদ একটি ব্যাপার হচ্ছে “মেক্সিকান ওয়েভ”। এই ওয়েভ দেখতে যেমন অসাধারন, তেমনি এটি করতেও সমান আনন্দ লাগে। ক্রিকেট ফুটবল সহ যেকোনো খেলাতেই “মেক্সিকান ওয়েভ” দেখা যায়। দর্শকরা হাত উঁচিয়ে এই ওয়েভের সূচনা করে থাকেন। এই ওয়েভ যখন স্টেডিয়ামে চলতে থাকে তখন মনে হয় স্টেডিয়ামটি একটি ছোটখাটো সমুদ্র। গ্যালারিতে ওয়েভের শোঁ শোঁ শব্দ সমুদ্রের গর্জনের সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না। নিচের ভিডিওটি একটি মেক্সিকান ওয়েভেরঃ

দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোঃ

এটা বেশি দেখা যায় বড় বড় আসরগুলোর সময়। যেমন বিশ্বকাপের সময় অনেকেই দলবেঁধে স্বাগতিক দেশে যায় খেলা দেখতে। নিজ দেশের খেলা দেখতেই বেশিরভাগ মানুষ যায়। দুই খেলার মাঝের সময়ে তারা ছোটো খাট ভ্রমনও সেরে নেয়। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যায় তাদের। এটা বেশি হয় ক্লাব ফুটবল ম্যাচগুলোতে। অ্যাওয়ে ম্যাচে সফরকারীদের স্থানীয় দর্শকেরা তাদের দলকে সাপোর্ট দিতে হাজির হয়ে যায়।

এমনকি স্টেডিয়ামের ভিতরে একসাথে বসে নেচে গেয়ে দলকে অবিরাম উৎসাহ দিয়ে যান তারা। এছাড়া, ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বার্মি আর্মি দর্শকের মাঝেও এই উন্মাদনা দেখা যায়।

   

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন