আমাদের এ পৃথিবীতে মূল্যবান অনেক পাথর আর খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। খনি থেকে পাওয়া পাথরের মধ্যে অনেকগুলোই অত্যন্ত দুর্লভ এবং বহু গুনাগুনে সমৃদ্ধ। এসব পাথর দেখতে যেমন অত্যন্ত সুন্দর তেমনি এদের বাজারদরও অনেক। হীরা, চুনি, পান্না, নীলা এরকম বহু মূল্যবান পাথর পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায় যেগুলো মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষার বস্তু। এসব রত্ন পাথরের রয়েছে অনেক ইতিহাস, এদের গঠন উপাদান ও প্রকৃতি হয়ে থাকে বিভিন্ন, এদের সন্ধানও মেলে ভিন্ন জায়গায়, অনেক জায়গায় অনেক রত্নকে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হয়ে থাকে। মহামূল্যবান বিভিন্ন সব রত্নপাথরের এরকম অনেক তথ্য আমরা জানবো আমাদের এই আয়োজনে। আজকে জানবো হীরা নিয়ে।
পরিসংখ্যান বলে পৃথিবীর ৯০ ভাগ নারীর গহনা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ ডায়মন্ড বা হীরা।
হীরাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন হিসেবে ধরা হয়, অলংকার তৈরিতে যার ব্যবহার স্বর্ণের পরেই। হীরার ইংরেজি প্রতিশব্দ ডায়মন্ডের উৎপত্তি গ্রীক শব্দ ‘এ্যাডামাস’ থেকে। যার অর্থ সবচেয়ে কঠিন।
হীরার সৃষ্টি হয় কার্বন নামক বিশুদ্ধ এক মৌল থেকে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন ভূপৃষ্ঠতল থেকে কমপক্ষে ১৪০ কিলোমিটার নীচে পৃথিবীর আবরণ ও কেন্দ্রের চাপের কারণে হীরা গঠিত হতে ১ বিলিয়ন বছরের বেশি সময় প্রয়োজন।
হীরার রঙ বর্ণহীন স্বচ্ছ, লাল এবং কালচে হতে দেখা যায়। এর মধ্যে বর্ণহীন স্বচ্ছ হীরা সবচাইতে মূল্যবান। হীরা সকল প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে অধিক তাপ সহনশীল এবং কঠিন। খনী থেকে যখন হীরা উত্তোলন করা হয় তখন এর চাকচিক্য থাকে না। বরং হীরা কেটে পলিশ করার মাধ্যমে এর চাকচিক্য বাড়ানো হয়ে থাকে। হীরাকে মাপা হয় ক্যারট এককে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে ২৪ ভাগের কত ভাগ স্বর্ণ তা বোঝাতে ক্যারট ব্যবহৃত হয়। হীরার ক্ষেত্রে ১ ক্যারট মানে ২০০ মিলিগ্রাম হীরা।
বলা হয়ে থাকে, হীরা সর্বপ্রথম মূল্যবান রত্ন হিসেবে উত্তোলিত এবং ব্যবহৃত হয় ভারতীয় উপমহাদেশে। মোঘল সম্রাজ্যে হীরার কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কোহিনূর হীরা যা ষোড়শ শতাব্দিতে মোঘলদের হাতে আসে। সম্রাট শাহজাহানের তৈরি করা ময়ূর সিংহাসনে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে নানা হাত ঘুরে ১৮৫০ সালে আফগান মহারাজ রণজিৎ সিং ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেন। আশির দশকে কোহিনূর হীরার মালিকানা নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ভারত, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান কোহিনূর হীরা দাবি করে। ব্রিটেন সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এবং কোহিনূর এখনো ব্রিটেনের যাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।
বর্তমানে পৃথিবীর মোট উত্তোলিত হীরার ৫০ ভাগ হীরা উত্তোলন হয় আফ্রিকাতে। উত্তোলিত এই হীরা কেটে পলিশ হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকায় উত্তোলিত এই হীরার অর্থ যুদ্ধ সহ অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দাঙ্গার পেছনে ব্যয় হতো। এজন্য এই হীরাকে বলা হয় ‘Blood Diamond’ বা রক্ত হীরক। হীরার ব্যবসাকে পরিছন্ন রাখা ও হীরার আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে বিভিন্ন নীতি নির্ধারন করে থাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা কিম্বারলি প্রসেস।