সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লবের এই যুগে একজন অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। ইন্টারনেট ও অ্যাপসগুলো দায়িত্বের সাথে ব্যবহারের জন্য অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের কী পরামর্শ দেবেন সেই সম্পর্কে কিছু নীতিমালা তুলে ধরা হলো।
সন্তানের সাথে কথা বলুন
আপনি আপনার সন্তান সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। তাদের সাথে বসুন এবং ইন্টারনেটের সুফল সম্পর্কে আলোচনা করবেন। পড়াশোনা থেকে শুরু করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, বিনোদন ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। তাদের সাথে বসে এমন সব উপায় বের করুন যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা তাদের জ্ঞানের সীমানাকে আরও প্রসারিত করতে পারে। কথা বলার সময় ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ করতে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি করুন। আপনার সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে কথোপকথন চালিয়ে যান। আপনার সন্তান যদি ইতিমধ্যেই ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে থাকে, তাহলে খুঁজে বের করুন তারা কী কী সাইট এবং অ্যাপস ব্যবহার করছে, এই সকল সাইট ও অ্যাপস কীভাবে কাজ করে এবং তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে কিনা। আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে দিন যে, ইন্টারনেটে তারা যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে তারা সে বিষয়ে নির্দ্বিধায় আপনার সাথে কথা বলতে পারে। আপনি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করুন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের শিষ্টাচার সম্পর্কে জানা
সমাজে বসবাসের যেমন কিছু নিয়ম আছে, তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিজেকে প্রশ্ন করা- আমার কি এটা পোস্ট করা উচিত? এবং এই পোস্ট কি কোনো ব্যক্তিকে আহত করতে পারে? অনলাইনে কিছু পোস্ট করার আগে ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড পোস্টটি সম্পর্কে ভাবুন, লক্ষ্য করুন এটি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে কিনা।
আমাদেরকে কিছু নীতিমালা মেনে চলতে হবে। যদি কোনো পোস্ট আমরা আমাদের পরিবারের সাথে শেয়ার করতে না পরি, তাহলেও সেই পোস্টটি আমাদের শেয়ার করা উচিত নয়।
সবসময় সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না হলেও তাদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারবিধি তৈরি করুন।
আপনার সন্তানকে ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম তৈরি করুন। আপনি এমন নিয়মন তৈরি করুন যাতে আপনার শিশুরা তাদের মোবাইলে কোনো অ্যাপস ডাউনলোড করার আগে অবশ্যই আপনার অনুমতি নেয়। আপনার সন্তান যখন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে প্রবেশ করে, সে অবস্থায় আপনি এমন একটি প্রোফাইল সিকিউরিটি সেটিং ঠিক করুন যা আপনার সন্তানের জন্য নিরাপদ।
আপনার সন্তানকে বলুন তারা যেন অন্য কাউকে তাদের পাসওয়ার্ড না দেয়
কারো সাথেই পাসওয়ার্ড শেয়ার করা উচিত নয়- এমনকি ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা প্রেমিক-প্রেমিকার সাথেও না। কারো সাথে পাসওয়ার্ড শেয়ার করলে আপনার সন্তান ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, তাই পাসওয়ার্ডগুলোকে শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই রেখে দেয়া শ্রেয়।
আপনার সন্তান কোন বয়স থেকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং ডেস্কটপ ব্যবহার শুরু করবে তা ঠিক করুন
অভিভাবক হিসেবে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং ডেস্কটপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি আপনার সন্তানের বয়সসীমা নির্ধারণ করুন। নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপস ডাউনলোড করতে তাদেরকে নিষেধ করুন। অভিভাবকের উচিত ইউজার ম্যানুয়াল সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখা, যাতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এভাবে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
কম্পিউটার ও অন্যান্য যেসব ডিভাইস শিশুরা ব্যবহার করে সেগুলোতে ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ সেট করুন, যাতে উপযুক্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুরা কিছু নির্দিষ্ট কনটেন্টের নাগাল না পায়। অনলাইনে অনেক ধরণের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস ও সফটওয়্যার রয়েছে, যার মধ্যে কিছু কিছু ফ্রিতে পাওয়া যায়।
গেইম, অনলাই টিভি, মুভি ও বিভিন্ন অ্যাপে এইজ রেটিং ব্যবহার করে নিশ্চিত হোন যে আপনার সন্তান তার বয়স উপযোগী কনটেন্ট ব্যবহার করছে কিনা।
আপনার সন্তানদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় তাকে শিখিয়ে দিন ইন্টারনেট, মোবাইল ডিভাইস, গেইমস ও অন্যান্য ডিভাইসে সে ছোট ভাইবোনদেরকে কোন ধরণের কনটেন্ট দেখাবে বা দেখাবে না। একইভাবে সবচেয়ে বড় সন্তানটিকে শিখিয়ে দিন, তার ছোটজনকে সে যেন একই শিক্ষা দেয়।
শিশুদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য কোন বয়সসীমাটি উপযুক্ত এই বিষয়ে অন্যান্য অভিভাবক ও শিশুর শিক্ষকদের সাথেও আলাপ করতে পারেন।
সূত্র: গেট সেইফ অনলাইন