ATM মেশিন কীভাবে কাজ করে?

আজকাল সবকিছুই আধুনিক হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আধুনিক হয়ে গিয়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থাও। আগের মতো এখন আর টাকা তোলার জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। প্রায় সব ব্যাংকেরই রয়েছে এটিএম (ATM) ব্যবস্থা। নির্ধারিত কার্ড এটিএম মেশিনে প্রবেশ করিয়ে টাকার অংক বলে দিলেই বের হয়ে আসে প্রয়োজনীয় টাকা। কমবেশী আমরা সবাই এই এটিএম মেশিনের সাথে পরিচিত, কিন্তু এটা আসলে কাজ করে কিভাবে?

এটিএম (ATM)-এর পুরো নাম হল Automated Teller Machine। এছাড়াও এটি অনেক দেশে Automated Banking Machine, Cash Machine, Cashpoint, Cashline প্রভৃতি নামেও পরিচিত। ব্যাংক সাধারণত ১০.০০ টা থেকে ৪.০০ টা পর্যন্তই খোলা থাকে, অর্থাৎ লেনদেনের কাজ এই সময়ের ভেতরেই সারতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি কারও রাত ১০.০০ টায় কিংবা অন্য এমন সময়ে টাকার দরকার পড়ে যখন ব্যাংক খোলা নেই, তখন কি হবে? এই অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই ১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্ক শহরের City Bank of New York-এ প্রথম এটিএম মেশিন স্থাপিত হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ তখনও প্রযুক্তির ওপর এতটা নির্ভরশীল না থাকায় খুব কম মানুষই এই এটিএম মেশিন ব্যবহার করেছেন। তাই কয়েক মাস পরেই বন্ধ করে দেয়া হয় এটিএম ব্যবস্থা।

এরপর ১৯৬৭ সালে লন্ডন শহরের Barclays Bank-এ আবার স্থাপন করা হয় এটিএম মেশিন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে এই প্রযুক্তি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই টাকার মেশিনকে। ইউরোপ ও আমেরিকাতে এটিএম মেশিন অনেক আগে থেকেই চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটিএম ব্যবস্থা চালু হয়েছে খুব বেশী দিন হয়নি। কিন্তু তবুও এই অল্প সময়ের মধ্যেই সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটিএম ব্যবস্থা এবং এখন প্রায় সব ব্যাংকেই রয়েছে এটিএম সুবিধা।

এটিএম সুবিধা ভোগ করার জন্য ব্যাংক তার ক্লায়েন্টদের একটি বিশেষ কার্ড দিয়ে থাকে। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ড প্রভৃতি কার্ড দিয়ে এটিএম সুবিধা নেয়া যায়। এটিএম মেশিনগুলো Interbank Network-এর সাহায্যে নির্ধারিত ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে। যার ফলে এটিএম কার্ড প্রবেশ করালে ক্লায়েন্টের একাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য সহজেই চলে আসে এটিএম মেশিনে। প্রত্যেক ক্লায়েন্টের কাছে তাঁর জন্য নির্ধারিত বিশেষ একটি PIN নম্বর থাকে। কার্ড প্রবেশ করানোর পর এটিএম মেশিনে সেই নম্বরটি টাইপ করতে হয়। এই ব্যবস্থার কারণে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে অন্য কেউ সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবে না। কারণ PIN নম্বর প্রবেশ না করালে এটিএম মেশিন থেকে কোনও টাকা তোলা যাবে না। সঠিক PIN নম্বর প্রবেশ করানোর পর প্রয়োজনীয় টাকার অংক টাইপ করতে হয়। ঐ পরিমাণ টাকা যদি ক্লায়েন্টের একাউন্টে থাকে, তাহলে এটিএম মেশিন মুহূর্তেই ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটে ঐ অংকের টাকা বের করে দেয়।

 

একটি এটিএম মেশিন সাধারণত নিম্নোক্ত অংশগুলো নিয়ে তৈরি হয়ঃ

CPU- এটিএম মেশিনের মূল তথ্য সংগ্রহকারী অংশ

Magnetic Card Reader- এর সাহায্যে প্রবেশকৃত কার্ডটি ক্লায়েন্টের জন্য নির্ধারিত সঠিক কার্ড কিনা, তা নির্ণয় করা হয়।

PIN PAD- অনেকটা ক্যালকুলেটরের কি-প্যাডের মতো দেখতে PIN Pad-এ টাইপ করে PIN নম্বর দিতে হয়।

Display- তথ্য প্রদর্শন করার জন্য মনিটর।

Function Key Buttons- মনিটরের পাশে স্থাপিত কিছু বাটন যেগুলোতে চাপ দিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন অপশন বেছে নেয়া যায়।

Record Printer- লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণের জন্য এর সাহায্যে ক্লায়েন্টকে লেনদেনের তথ্যসম্বলিত কাগজ দেয়া হয়।

Vault- এটিএম মেশিনের যে সংরক্ষিত অংশে টাকা রাখা হয়।

এছাড়া বেশ কিছু সেন্সর ও ইনডিকেটর থাকে যা ক্লায়েন্টকে এটিএম ব্যবস্থা বুঝতে সাহায্য করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন