পরিমিত পরিমাণে গভীর ঘুম মানুষের মস্তিষ্ক থেকে আবর্জনা দূর করে মস্তিষ্ককে সতেজ করে তোলে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। গবেষনায় আরো জানা গেছে, নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে ঘুমালে মস্তিষ্ক থেকে ক্ষতিকর উপাদান সহজে দূর হয়।
মানুষের মধ্যে পাশ ফিরে ঘুমানোর প্রবনতা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বন্যপ্রাণীরাও এই ভঙ্গিতেই সবচেয়ে বেশি ঘুমায়।
স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, পাশ ফিরে ঘুমালে মস্তিষ্কের অপ্রয়োজনীয় উপাদান পরিস্কার হয়ে মস্তিষ্কের উন্নতি করে যা আলঝেইমারসহ মস্তিষ্কের অন্যান্য সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।
কয়েক বছর আগে ইউনিভার্সিটি অফ রোচেস্টারের গবেষকেরা আবিষ্কার করেন, মানুষের মস্তিষ্ক স্বকীয় প্রক্রিয়ায় নিজেকে বিশুদ্ধ করে। একে বলা হয় গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম। এই প্রক্রিয়ায় অ্যামিলয়েড বেটা এবং টাউ প্রোটিনের মত অনেক ক্ষতিকর উপাদান মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে যায়।
এই গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম সবচেয়ে বেশি কাজ করে ঘুমন্ত অবস্থায়। ঘুমানোর বিভিন্ন ভঙ্গিতে এটা কীভাবে কাজ করে তাই দেখতে চেয়েছেন গবেষকেরা। তারা ইঁদুরকে ৩টি ভিন্ন ভঙ্গিতে (পাশ ফিরে, চিৎ হয়ে এবং উপুড় হয়ে) ঘুম পাড়ান এবং তাদের মস্তিষ্কের এমআরআই করে দেখেন।
এ পরীক্ষায় দেখা যায়, পাশ ফিরে ঘুমালে অন্য দুই ভঙ্গির চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি অ্যামিলয়েড বেটা পরিষ্কার হয়। এই সব আবর্জনা পরিষ্কার না হলে সেগুলো মস্তিষ্কের জন্য ভয়াবহ অসুখ বয়ে আনতে পারে।
গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেমে মস্তিষ্কের নালীগুলোর ভেতর দিয়ে সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িড চলাচল করে। ফলে মস্তিষ্কের আবর্জনা বের হয়ে শরীরে যায় এবং সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে শরীর থেকে বের হয়।
দিনের বেলা গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় এর কার্যকারিতা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। মূলত এই কারণেই আমাদের ঘুমানো উচিত।
পাশ ফিরে ঘুমালে এই প্রক্রিয়া আরও ভালোভাবে কাজ করে কেননা তখন সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িড মস্তিষ্কের আরও বেশি আনাচে-কানাচে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, পাশ ফিরে ঘুমালে নাক ডাকা এবং স্লিপ এপনিয়ার মত সমস্যাও দূর হয়।
একই সাথে আমাদের ভালো ঘুম বা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। ঘুম গভীর হওয়ার জন্য কিছু টিপস দেয়া হল।
– ঘুমানোর আগে চা বা কফি না খাওয়া।
– রুটিন অনুযায়ী ঘুমানো এবং জাগা। এতে শরীরের ছন্দ ঠিক থাকে।