হ্যাভলক, অভিজিত্ দাস : আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত বঙ্গোপসাগরে। ৬০০ দ্বীপের সমষ্টি হলো এই দ্বীপপুঞ্জ। এই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে প্রথমেই আপনাকে পৌঁছতে হবে এখানকার পোর্ট ব্লেয়ার। এটাই হল এই দ্বীপপুঞ্জের এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট। সমুদ্র পথেও যেতে পারেন। তবে সময় লাগবে অনেক। তবে আগে থেকে হোটেল ও বেড়াতে যাওয়ার গাড়ি বুক করে নিলে সুবিধে হয়।
আগে থেকে ঠিক করে নিন কী দেখবেন। এরকম একটা তালিকা হতে পারে। রস আইল্যান্ড, হ্যাভলক আইল্যান্ড, ব্যারেন আইল্যান্ড, লিটল আন্দামান, জলি বোয়ে আইল্যান্ড এবং সেলুলার জেল। স্থলপথে সেলুলার জেল দর্শন দিয়ে শুরু করুন আপনার আন্দামান ভ্রমণ।
সেলুলার জেলের চারদিকে ছড়িয়ে থাকা জায়গায় ঘুরে দেখতে পারেন। কয়েদিদের যেখানে রাখত। ছোট্ট খুপরি ঘর। লোহার গেট। খাবার দিতো গেটের বাইরে রেখে পা দিয়ে ঠেলে দিয়ে। পানীয় জল প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম দিতো। তাদের কী রকম শাস্তি দেওয়া হতো তার নিদর্শন দেখতে পাবেন সন্ধ্যাবেলা লাইট ও সাউন্ড অনুষ্ঠানে।
পরের দিন সকালে স্টিমারে চেপে সামুদ্রিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যান রস আইল্যান্ড। একদিন এই দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এটা ছিল ব্রিটিশ কলোনির হেড কোয়ার্টার। সেই ধ্বংসাবশেষ চারদিকে ছড়িয়ে আছে। শিকড়ের জালের আড়ালে রয়েছে ব্রিটিশদের কবর খানা, ক্যাথিড্রাল আর তাদের বাসস্থান। তবে খেয়াল রাখতে হবে ফেরি বা ক্রুজ চলে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
এরপরে চলে আসুন নর্থ বে আইল্যান্ড। ওখানে স্কুবা ডাইভিং আর সি-ওয়াক করতে পারেন। অথবা গ্লাস বোট করে চারদিকে ঘুরে দেখুন সমুদ্রের তলার কোরাল ও নানা ধরনের মাছ।
পরের দিন সকালে ক্রুজে চেপে বেরিয়ে পড়ুন হ্যাভলক দ্বীপের উদ্দেশে। এখানকার সাদা বালির বিচ, স্বপ্ননীল জল আর চারপাশে সবুজ বনানী আপনার ক্লান্তি দূর করবে। সেই রাতটা রিসোর্টে থেকে পরের দিন সকালে চলে আসুন বিখ্যাত রাধানগর বিচে। এই সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সমুদ্র সৈকতের মধ্যে অন্যতম। স্নরকেলিং, গেইম ফিশিং, সুইমিং এবং স্কুবা ডাইভিং এখানে অন্যতম পাসটাইম। রাধানগর বিচের মতো এরকম আরও অনেক সমুদ্র সৈকত বেছে নিতে পারেন। কালাপাত্থর বিচ, বিজয়নগর বিচ, এলিফ্যান্ট বিচ, নেচার বিচ কিংবা ভগবানপুর বিচ। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই প্রতিটি সমুদ্র সৈকত। আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে কোথাও সাক্ষাত পেতে পারেন এখানকার আদিবাসী জারোয়াদের।
কীভাবে যাবেন
পোর্ট ব্লেয়ার যাওয়ার জন্য রয়েছে নানা এয়ারলাইন্সের বিমান। নামতে হবে বীর সাভারকার এয়ারপোর্টে। জাহাজেও যেতে পারেন। খরচ কম। কিন্তু সময় লাগবে প্রায় ৩দিন।
কোথায় থাকবেন
এখানে হোটেল পাওয়ার খুব কঠিন নয়। তবে অনলাইনে আগে থেকে বুকিং করা থাকলে সুবিধা হয়। পৌঁছে বুকিং করতে গেলে দাম কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
কখন যাবেন
আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণের সেরা সময় হলো ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। অথবা গ্রীষ্মে এপ্রিল থেকে জুন। বর্ষার সময়টা বাদ দিয়ে গেলেই ভালো হয়।
যা করবেন না
রেস্ট্রিক্টেড অথবা ট্রাইবাল এলাকায় অনুমতি ছাড়া ঢুকবেন না। প্লাস্টিকের প্যাকেট বা ঠোঙা রাস্তায় বা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
যা সঙ্গে রাখবেন
গ্রীষ্মে বেড়াতে গেলে সানস্ক্রিন অবশ্যই রাখবেন। রাখবেন রোদ চশমা। আর বর্ষায় নিশ্চিতভাবে মাথা পিছু একটি করে ছাতা।
লেখাটি এই সময় থেকে সংগৃহীত ও কিঞ্চিত পরিবর্তিত