ঘুমের মাঝে এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডগুলো কি আপনিও ঘটান?

রাতে এক রুমে ঘুমিয়েছেন কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে আবিষ্কার করলেন অন্য এক রুমে! সকালে ফোনের কললিস্টে একজনের নাম দেখলেন কিন্তু রাতে কী কথা বলেছেন মনে করতে পারছেন না? এমনকি রাতে খাওয়ার পরও সকালে উঠে দেখলেন আপনার তা মনে নেই?

এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের জীবনেই হরহামেশা ঘটে। অন্তত দু’একবার তো ঘটেই থাকে। স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমের মধ্যে হাঁটা ব্যাপারটার সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। এরকম আরও কিছু অদ্ভুত কাজ করে থাকি আমরা ঘুমের মধ্যে।

ডাক্তারি ভাষার এগুলোকে বলা হয় ‌‌‌'প্যারাসোমনিয়া'। ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক কাজকর্মকে প্যারাসোমনিয়া বলে। তবে স্বস্তির খবর এই যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ এই ধরণের সমস্যায় ভুগে থাকেন।

মূলত দুইটি কারণে এই সমস্যা দেখা যায়। যদি আপনি হতাশা বা প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগেন। এবং কোন নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের ফলে বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মত সমস্যা থাকলে।

স্লিপ ওয়াকিং
স্লিপ ওয়াকিং প্যারাসোমনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ ঘটনাগুলোর একটি। অনেকের ধারণা মানুষ এসময় স্বপ্নের ঘোরে থাকে। কিন্তু এটা ঘুমের তৃতীয় স্তরে ঘটে বলে স্বপ্নের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এ কারণে ঘুমের মধ্যে হাঁটার সময় কাউকে জাগিয়ে তোলা বা দিক পরিবর্তন করা খুবই কঠিন।

আর সেটা করাও ঠিক নয়। যদি কাউকে হুট করে জাগিয়ে তোলা হয় তাহলে ফলাফল মারাত্মক হতে পারে।যাদের স্লিপ ওয়াকিঙের সমস্যা রয়েছে তারা সাধারণত ইনসোমনিয়া, ক্লান্তি, দিনের বেলায় ঘুম, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিতে ভুগে থাকেন।

কথা বলা বা চিৎকার করা
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ঘুমের মধ্যে হাঁটা, কথা বলা বা চিৎকার করে উঠার প্রবণতা দেখা দেয়। রাতে স্লিপ টেরর বা ঘুমাতংক দেখে অনেকেই কথা বলেন বা চিৎকার করে উঠে। অনেকসময় দেখা যায় বাচ্চারা বিছানায় উঠে বসে চোখ খুলে রেখেছে অথচ সে কিন্তু ঘুমিয়ে আছে।

সাধারণত ১২ বছরের কমবয়সীদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। তবে অনেকে ঘুমাতংকের সাথে দুঃস্বপ্ন মিলিয়ে ফেলেন। দুটো আসলে ভিন্ন ঘটনা। ঘুমাতংক ঘটে ঘুমের ৩য় স্তরে এবং ঘুম থেকে উঠার পর সেটার কোন স্মৃতি আর মনে থাকে না।

এসএমএস
ঘুমের মধ্যে এসএমএস পাঠানোটা শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এমন ঘটনা ঘটে থাকে। যারা রাতে বালিশের পাশে মোবাইল নিয়ে ঘুমান তাদের ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। যদিও জিনিসটি ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু কিছু সময় তা লজ্জাজনক হতে পারে।

গাড়ি চালানো
স্লিপ ওয়াকিং মারাত্মক দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে যদি আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে বাসার বাইরে চলে যায়। মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির একজন স্নায়ুবিশারদ মাইকেল হাওয়েল বলেন, তার একজন রোগী এক রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমের মধ্যে গাড়ি চালানো শুরু করে এবং একটি গাছের সাথে গাড়ি ধাক্কা খাওয়ার পর তার ঘুম ভাঙে। তিনি বলেন ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এমনটা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে।

ঘুমের মধ্যে খাওয়া
ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়ার মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ গেরহাম বলেন, ‘আমি একজন নারীকে চিনি যিনি রাতে ঘুমের মধ্যে রান্নাঘরে গিয়ে আপেল মনে করে কাঁচা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেতেন। সকালে উঠে তিনি মুখে দুর্গন্ধ পেতেন কিন্তু কারণ খুঁজে পেতেন না’। এটাও ঘুমের ৩য় স্তরে ঘটে থাকে।

অনেকসময় যারা ডায়েট করে তাদের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। তবে এরা কখনোই ভালো কিছু খায় না। বরফ চাবানো এমনকি সিগারেটের উপর মাখন মেখে খাওয়ার মত ঘটনার নজিরও আছে। ঘুমের মধ্যে খাওয়ার কারণে ওজন বাড়া, দাঁতের সমস্যা থেকে বাজে খাবার খাওয়ার ফলে অনেক দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে।

অস্বাভাবিক আচরণ
অনেকে ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক এবং বিপজ্জনক আচরণ করেন। ঘুমের মধ্যে কারও কারও স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। কিন্তু স্লিপ প্যারালাইসিস না ঘটার বদলে আরও মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন আক্রমনকারী ব্যক্তি বা তার আশেপাশের কেউ।

হাওয়েল জানান, তার একজন রোগী বাস্কেটবল মনে করে তার স্ত্রীর মাথা চেপে ধরতেন। আরেকজন নিজেকে স্পাইডারম্যান মনে করে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়তেন। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশি ঘটে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন