মাঠের বল দখলের লড়াইয়ের প্রধান মারণাস্ত্র এই “টিকিটাকা” ফুটবল কৌশল। মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে এর চেয়ে শৈল্পিক কোনো উপায় হয়তো নেই। মাঝমাঠের এই শিল্প একদিকে যেমন বলের দখল ধরে রাখে, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগকে সুকৌশলে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।
এবার দেখা যাক টিকিটাকা আসলে কি…।
ছোট ছোট পাস এবং মুভমেন্টের মাধ্যমে বল দখলে রেখে অন্য খেলোয়াড়ের কাছে নিখুঁতভাবে বল পাস দেয়ার কৌশলই মূলত টিকিটাকা। মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের ভূমিকা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি থাকে। টিকিটাকায় নিজের দক্ষতা ব্যবহারের মাধ্যমে বল বের করে নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে আক্রমনভাগ কিঞ্চিৎ পরিমাণ দুর্বল থেকে যায়।
বলা হয়ে থাকে, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ এর দিকে ইয়োহান ক্রুইফ যখন বার্সেলোনার ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই কৌশলের আংশিক প্রয়োগ করেন। তবে এর যাবতীয় উন্নয়ন ঘটেছে ভিসেন্তে দেল বস্কের অধীনে স্পেন জাতীয় দলের। টিকিটাকার আজকের এই অবস্থানে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান হচ্ছে বার্সেলোনার সাবেক ও বর্তমান বায়ার্ন মিউনিখের কোচ পেপ গার্দিওলার। অবশ্য এক্ষেত্রে যতটা অবদান গার্দিওলার রয়েছে, সেই পরিমাণ অবদান বার্সার ইনিয়েস্তা এবং অনস্বীকার্যভাবে লিওনেল মেসির রয়েছে।
আর সফলতার দিক বিবেচনায় আনলে টিকিটাকা ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি সফল স্পেন জাতীয় ফুটবল দল (ইউরো ২০০৮, বিশ্বকাপ ২০১০ এবং ইউরো ২০১২)। আর ২০০৯ সালে বার্সেলোনার হেক্সা জয়ের পেছনে মূল অবদান এই কারুকার্যমন্ডীত ফুটবল শিল্পের।
টিকিটাকার এতো এতো জয়গানের মধ্যেও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। গতিময় ফুটবল খেলা দলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জার্মান ফুটবল টিম এবং ক্লাবের মধ্যে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ, ইংলিশ ক্লাব চেলসি সহ আরও কয়েকটি দল। এই দানবীয় গতির কাছে মাঝেমাঝে এই টিকিটাকা শিল্পকে অসহায় মনে হয়। যার প্রমান পাওয়া যায় ২০১১-১২ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে, যেখানে চেলসির মাঠে ১-০ গোলে ধরা খেয়ে যায় আকাশে ভাসতে থাকা বার্সেলোনা। চেলসির হয়ে একমাত্র গোলটি করেন দিদিয়ের দ্রগবা। টিকিটাকা দিয়ে বার্সার চন্দ্র জয়ের স্বপ্নকে ধরাশায়ী করে স্টামফোর্ড ব্রীজের দল চেলসি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই টিকিটাকার ফলে এমনও হয়েছে মাঝে মাঝে খেলায় ১-০/২-০/২-১ গোলে হেরে যাওয়ার পরও বল দখল থাকে প্রায় ৮০% এবং এক ম্যাচে ১০৫০/১১০০ টি পাস সম্পূর্ণ করেছে বার্সেলোনা।