দেশের বাইরে ভ্রমণের জন্য প্রথমেই যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হলো পাসপোর্ট। সবুজ কভারে ছোট্ট এই বইটি না থাকলে দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। পাসপোর্ট এটাই প্রমাণ করে যে পাসপোর্টধারী ব্যক্তিটি ঐ নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক। পাসপোর্টে সাধারণত ব্যক্তির নিজস্ব তথ্য, ঠিকানা, প্রভৃতি লিখিত থাকে। সেই সাথে যে দেশে ভ্রমণ করছে, সেই দেশের ভিসাও সংযুক্ত থাকে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বদলেছে সবকিছুই। পূর্বের সনাতনধর্মী পাসপোর্ট পাল্টে এখন সময় এসেছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের। এয়ারপোর্টে সহজেই কম্পিউটারের সাহায্যে পরীক্ষা করার জন্য এই মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্ম। এই ব্যবস্থা যাত্রীদের সময় বাঁচায় ও অনেক হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করে।
অন্যান্য দেশে অনেক আগে থেকেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটি চালু হয়েছে খুব সম্প্রতি। যাদের এখনও আগের পাসপোর্ট রয়েছে, তাদেরকে এই বছরের মধ্যেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করিয়ে নিতে হবে, না হলে দেশের বাইরে যাওয়া তাদের সম্ভব হবে না। এ বছরের এপ্রিলের মধ্যে পুরনো পাসপোর্ট পাল্টে মেশিন রিডেবল করিয়ে নেওয়ার নির্দেশ থাকলেও পুরনো পাসপোর্ট দিয়ে চালানো যাবে এ বছর।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসা সর্বপ্রথম চালু হয় ১৯৮০ সালের দিকে বিভিন্ন দেশে। এতে সাধারণ পাসপোর্ট ও ভিসার মতোই সব তথ্য যুক্ত থাকে। এর পাশাপাশি এতে কম্পিউটারে পাঠযোগ্য একটি পৃষ্ঠা থাকে যেখানে একটি নির্দিষ্ট সাংকেতিক নম্বর রয়েছে। এই নম্বরটি মেশিন পড়ে নিয়ে পাসপোর্টধারীর পরিচয় শনাক্ত করে। পাসপোর্টে সাধারণত নিম্নোক্ত তথ্যাবলি থাকে-
দেশের তথ্য, পাসপোর্টধারীর নাম, জাতীয়তা, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, পাসপোর্টের মেয়াদ, ভিসার তথ্যাবলি, ব্যক্তিগত নম্বর প্রভৃতি।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থাকলে সাধারণ পাসপোর্টের মত সব তথ্য মিলিয়ে যাচাই করতে হয় না। বরং পাসপোর্ট রিডিং মেশিন দিয়ে সহজেই পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করা যায়। পাসপোর্টের নিচের দিকে একটি আলাদা অংশ থাকে, যাকে মেশিন রিডেবল জোন বলে। এখানে দুই লাইনের কিছু তথ্য লেখা থাকে। এই লেখাগুলোকে হিজিবিজি এবং আজগুবি মনে হলেও আসলে এটাই পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই লেখাগুলো একটি বিশেষ এলগরিদম অনুসারে লেখা হয়। এই এলগরিদমটি শুধুমাত্র পাসপোর্টের জন্য ব্যবহার করা হয়, এটি ISO/IEC 7501-1:1997 এলগরিদম নামে পরিচিত। পাসপোর্ট রিডিং মেশিন এই এলগরিদম যাচাই করেই পাসপোর্টের বৈধতা নির্ণয় করে।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র দরকার হয় সেগুলো হল- পাসপোর্ট ফর্ম, চার কপি ছবি (সত্যায়িত), জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (সত্যায়িত)। ফর্ম জমা দেয়ার জন্য বাংলাদেশে মোট দশটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। এগুলো যেসব জায়গায় আছে সেগুলো হল- ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, যশোর ও গোপালগঞ্জ। নির্ধারিত দিনে সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে ছবি তুলে এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে পাসপোর্টের রশিদ নিয়ে নিতে হবে। এরপর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের নির্দিষ্ট সদস্যরা সকল তথ্যাদি শনাক্ত করে সঠিক বলে রিপোর্ট জমা দেয়ার পরেই পাসপোর্ট নেয়া যাবে।