বিজ্ঞানীরা এমন এক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন যা কোন অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারাই ধ্বংস হয় না। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত সবচেয়ে উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই ব্যাকটেরিয়া।
the Lancet Infectious Diseases নামক একটি পত্রিকায় এই গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
চীনে ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন ব্যাকটেরিয়া এমসিআর-১ নামে এমন একটি জিন বিকাশ করেছে যেটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
এমনকি ‘শেষ-ভরসা’ অ্যান্টিবায়োটিক নামে পরিচিত কলিস্টিনও এটিকে নির্মূল করতে পারছে না।
বিজ্ঞানীদের পরীক্ষাকৃত এক-পঞ্চমাংশ প্রাণী এবং ১৬ জন মানুষের দেহে তারা এমসিআর-১ ব্যাকটেরিয়াল জিনের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন।
University of Pittsburgh Medical Center -এর সহকারী অধ্যাপক আমেশ এ আডেলজা বলেন, ‘যদিও এই আবিষ্কার অত্যন্ত ভীতিকর কিন্তু এটি বিস্ময়কর নয়। ব্যাকটেরিয়া নিজেরা বাঁচার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবেই’।
যখন একটি ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তখন এক বা একাধিক এমনকি কোন অ্যান্টিবায়োটিকই তার উপর কাজ করে না।
প্রকৃতিতে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া রয়েছে এবং এরা সংখ্যায় ক্রমাগত বাড়ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং একটা সময় আসবে যখন কোন অ্যান্টিবায়োটিকই আর এদের ধ্বংস করতে পারবেনা।
অনিয়মিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে এ অবস্থা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। যেমন ধরুন আপনার শরীরে এক লাখ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। একটি অ্যান্টিবায়োটিক ১০ হাজার ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। আপনি ৮টি অ্যান্টিবায়োটিক খাবার পর দেখলেন আপনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন তাই আর বাকি ২টি খেলেন না। কিন্তু আরও ২০ হাজার ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে রয়ে গিয়েছে।
এরা আপনার দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে। তখন আর অ্যান্টিবায়োটিক আপনার দেহে কাজ করবে না। শুধু তাই নয়, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এরা প্রকৃতিতে ছড়াবে, অন্যের দেহে প্রবেশ করবে। ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা আরও বাড়বে। এমন এক সময় আসবে যখন আর কোন অ্যান্টিবায়োটিকই আর কাজ করবে না।
বিজ্ঞানীদের এই ধারণা সম্ভবত বাস্তব হতে চলছে। এমসিআর-১ এমন এক জিন যেটা কোন ওষুধেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। মানুষের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দিতে পারে।
যদিও এই ব্যাকটেরিয়া এখনো পর্যন্ত চীনেই পাওয়া গিয়েছে কিন্তু এটি ছড়িয়ে পড়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। একে প্রতিরোধ করতে সকলের সম্মিলিত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।