রং বদলানো পাহাড়ের গল্প

গিরগিটি কিংবা স্কুইড, যেকোনো অবস্থায় নিজের শরীরের রং পরিবর্তন করে ফেলে। কমবেশি সবাই এটি জানি। কিন্তু যখন বলা হবে একটি গোটা পাহাড় রং পরিবর্তন করছে, সেটা শুনতে কেমন লাগে ? শুনতে আজব লাগছে,তাইনা ? আসলে একটু আজবই ব্যাপারটা ! 

দিনভর রঙের হলি খেলে এই পাহাড়।উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত ‘ আইয়ারস রক ’ নামক পাহাড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি। স্থানীয়দের কাছে এই পাহাড় Uluru  নামে পরিচিত।  

১৮৭৩ সালের ১৯ জুলাই, গবেষক উইলিয়াম গোসসে সর্বপ্রথম এই পাহাড়টি প্রত্যক্ষ করেন।ফলে সেই সময়কার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মুখ্য কার্যনির্বাহী ‘ হেনরি আইয়ার ’ এর নামানুসারে পাহাড়টির নামকরণ করা হয়।  

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৬৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩৪৮ মিটার। চারপাশে মোট ৯.৪ কিলোমিটার বিস্তৃত এই পাহাড়।

স্বাভাবিকভাবে পাহাড়টি লাল মাটির ও বেলে পাথর দিয়ে তৈরি। তবে সূর্য উঠার সময় এবং ডুবার সময় পাহাড়ের রং হঠাৎ করেই পরিবর্তন হয়ে যায়। অবশ্য সারাদিনই কমবেশী আলো আঁধারের খেলা চলে এখানে। কখনো হলুদ, কখনো কমলা, আবার কখনো বা গাঢ় লাল কিংবা বেগুনী। রঙধনুর কোনো রংই যেনো বাদ রাখে না এটি।

এই রং বদলের মূল কারণ হচ্ছে পাহাড়টির অবস্থান। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় সূর্যরশ্মির আপতন কোণের ( Incident Angle ) পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে রং পরিবর্তন করে পাহাড়টি।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্য রশ্মিতে লাল ও কমলা রঙের আধিক্য থাকে। ফলে এ সময় পাহাড়টিকে লাল কিংবা কমলা মনে হয়। দুপুরের দিকে সূর্যরশ্মিতে অন্যান্য রঙের প্রাধান্য থাকে বলে তখন ক্ষণে ক্ষণে পাহাড় রং বদলায়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় বায়ুমণ্ডলের ভাসমান ধূলিকণা, পানিকণা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় তা কম বিক্ষেপিত হয়। এর ফলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় পাহাড়ে লাল আলো খুব সুন্দর করে পরিলক্ষিত হয়।  

এই এলাকায় সূর্যের আলোও অনেক বেশি আলো এবং তাপ প্রদান করে থাকে। এ পর্যন্ত এ এলাকায় সর্বোচ্চ ৪৭ ডিগ্রী পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ উচ্চ তাপমাত্রা তথা সূর্যরশ্মির সরাসরি আপতিত হবার কারণেই এরকম রং বদল হয় পাহাড়টির। 

 

               

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন