ওয়াসিম আকরাম, ম্যালকম মার্শাল, গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের ডেল স্টেইন, মিশেল জনসন এরা সবাই বিশ্ববিখ্যাত একই কারণে, চোখ ধাঁধানো সুইং বোলিং।
কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের কারণে ক্রিকেটের ধারাটাই অনেকটা বদলে গেছে। এখন যেমন ব্যাটসম্যানরা নেমেই ধুমধাম মার শুরু করেন, ১০ বছর আগেও এমনটা ছিল না। পুরো ম্যাচে ২-৩টা ছক্কা মারা মানেই অনেক কিছু। শহীদ আফ্রিদির মতো হাতে গোণা কিছু ব্যাটসম্যান শুধু ধুন্ধুমার চার-ছক্কা পেটাতেন। কিন্তু এখন ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩০০-৩৫০ রান তোলা ডাল-ভাত। এখনকার দর্শকরাও স্পিন বল আর টোকাটুকি খেলার চেয়ে ফাস্ট বল আর একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকানো দেখতেই বেশী পছন্দ করেন।
ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের খাটুনি অনেক বেশী। একটা কাঠের বলকে ঘণ্টায় ১৪০-১৫০ কিঃ মিঃ বেগে ছোঁড়া মুখের কথা নয়। তাই দেখা যায় ম্যাচ শুরু হলে ফাস্ট বোলাররা ইনিংসের প্রথমে ও শেষে বল করেন। ফাস্ট বোলাররা যদি ইনিংসের শুরুর ১০-১৫ ওভার খুব ভালমতো বোলিং করতে পারেন তাহলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন বোলিং দলের কাছে চলে আসে। ইনিংসের শেষের দশ ওভার বোলিং ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেননা সেইসময় ব্যাটিং দল অনেক মেরে খেলে। বোলিং ভালো করতে হলে বোলাররা লাইন লেংথের দিকে প্রথমে বেশী মনোযোগ দেই। লাইন লেংথ চলে আসলে তারা বাতাসের গতি কাজে লাগিয়ে সুইং বোলিং করেন। সুইং বোলিংয়ে অনেক কিছু প্রভাব ফেলে- বলের গতি, কিভাবে ছোঁড়া হচ্ছে, বলের ওজন, আবার সেইসাথে বাতাসের চাপ ও গতি।
ক্রিকেট বলের চামড়াতে মাঝ বরাবর সেলাই করা থাকে, এটাকে সীম (Seam) বলে। এই সীম সুইং বোলারদের অনেক কাজে আসে। সুইং বল করতে হলে বলটিকে এমন ভাবে ছুঁড়তে হয় যাতে সেটি সীম বরাবর ঘুরতে পারে। বলকে ঘুরতে বাতাস বেশ সাহায্য করে। ব্যাটসম্যান যদি ডানহাতি হন, তাহলে বোলার সীম কিছুটা বামে ঘুরিয়ে বলটিকে পিচ করান একে আউট সুইং (Out Swing) বলে। বাতাস যদি বল ঘোরার বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তবে তা বলকে ঠিকমতো ঘুরতে বাধা দেয় এবং বল যেখানে যাওয়ার কথা, সেখানে যায় না।
বাতাস যদি বল ঘোরার দিক থেকে প্রবাহিত হয়, সেখানেও একেবারে যে সমস্যা নেই তা কিন্তু নয়। এখানে বাতাসের চাপে বলের ঘোরার পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে বল যতটুকু বাঁক নেয়ার কথা, তার চেয়ে বেশী নেয়। ব্যাটসম্যান যদি বাঁহাতি হন, তবে বোলার বলটিকে সামান্য ডানে ঘুরিয়ে বল পিচ করান এবং একে ইন সুইং (In Swing) বলে। বাতাসের গতির সাথে সাথে এতে অবস্থিত জলীয় বাষ্প ও বাতাসের ঘনত্ব সুইংয়ে চাপ সৃষ্টি করে। বাতাসে জলীয় বাষ্প যদি বেশী হয়, তবে তা বাতাসের চাপ বৃদ্ধি করে। বাতাস বলের যেখানে চাপ সৃষ্টি করে, বল সেদিক থেকেই বাঁক নেয়।
সুইংয়ে আরও এক ধরণের ব্যাপার দেখা যায়। বোলার তখনই তাঁর মনের মতো সুইং করতে পারেন যখন বলটি একেবারে নতুন। কিন্তু বলটি আস্তে আস্তে পুরনো হতে শুরু করলে সুইংয়ের ওপর এর প্রভাব পড়ে। তখন বলটি যেদিকেই ছুঁড়ে দেয়া হোক না কেন, এর যে পাশ কম ক্ষয় হয়েছে, সেই পাশেই সবসময় বাঁক নেয়।
ধরো বোলার বোলিং করবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে এবং বোলার সীমের বাম পাশে চাপ প্রয়োগ করে বল ডেলিভারি করলো। স্বাভাবিকভাবে বল পিচ করার পরে বলটা আউট সুইং করবে। আচ্ছা যদি বলটা বাম দিকে বাঁক না খেয়ে যদি ডান দিকে বাঁক খাঁয় তাহলে এই বলটার নাম কি হবে বলতো ? এই মজার ও অদ্ভুত ডেলিভারি হচ্ছে রিভার্স সুইং (Reverse Swing)। অনেক বোলার এই রিভার্স সুইংকেও কাজে লাগিয়ে চোখ ধাঁধানো বোলিং করেন। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, জহির খান, এন্ড্রু ফ্লিনটফ এঁরা সবাই রিভার্স সুইংয়ে পারদর্শী ছিলেন।