পানির নিচের জগৎ খুবই রহস্যময়। এ যেন পৃথিবীর মাঝে আরেক পৃথিবী। জলের প্রাণীদের জীবনধারা অ্যাকুরিয়ামে দেখা আর সমুদ্রের মাঝে গিয়ে দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক কাজকর্মে কোন বিঘ্ন না ঘটিয়ে সাগরের রূপরহস্য উপভোগ করে থাকে ডুবুরিরা । টিউব আকৃতির নল ব্যবহার করে ডুবুরিরা পানির নিচে দীর্ঘক্ষণ শ্বাস গ্রহণ করার মাধ্যমে সাগরের সৌন্দর্য ও জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বা চলাফেরা উপভোগ করতে পারে। টিউব আকৃতির এই নলের নাম স্নরকেল। স্নরকেল ব্যবহার করার কারণে এই পদ্ধতিকে বলা হয় স্নরকেলিং।
স্নরকেল প্রায় ১ ফুট দৈর্ঘ্যের ইংরেজি L বা J আকৃতির একটি রাবার বা প্লাস্টিকের টিউব। এটির নিচের দিকে থাকে মাউথপিস যা ডুবুরির বা স্নরকেলারের মুখে থাকে। স্নরকেলের অপর মাথা থাকে পানির উপরে। স্নরকেলারের মুখ নিচের দিকে থাকায় জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক চলাচল দেখতে পারে আর স্নরকেলের এক মাথা পানির বাইরে থাকায় এর মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসও গ্রহণ করা যায় সহজে। স্নরকেলের মাঝে যেন পানি না থাকে তাই পানিতে নামার পর মুখে স্নরকেল দিয়ে জোরে ফুঁ দিতে হয়। এর ফলে স্নরকেলের এয়ারওয়ে পরিষ্কার থাকে ও শ্বাস গ্রহণ করার পথে পানি আসতে পারে না। মাঝে মাঝে স্নরকেলার লম্বা শ্বাস নিয়ে ডুব দেয় পানির গভীরে আর রংবেরঙের মাছ ও জলজ উদ্ভিদ কাছ থেকে পর্যবেক্ষন করে।
স্নরকেলিং করার সময় মুখে ডাইভিং মাস্ক ও পায়ে এক জোড়া ফিন পরিধান করে স্নরকেলার বা ডুবুরি। ফিনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পা নেড়ে সহজেই সাঁতার কাটা যায়। স্নরকেলিং বাইরের মানুষের কাছে চিত্তবিনোদনের উপায় হিসাবে বেশ পরিচিত। স্নরকেলিং এর জন্য বিশেষ কোন প্রশিক্ষণ নেই, তবে সাঁতার জানা ও স্নরকেল ব্যবহার করে শ্বাস গ্রহণ করার পদ্ধতি জানা জরুরি। যেকোনো ধরনের পানিতেই স্নরকেলিং করা যায়, তবে যেসব স্থানে পানির ঢেউ খুব কম আর পানি হিমশীতল নয় সেসব স্থানেই এটি তুলনামুলক নিরাপদ। স্নরকেলিং স্পোর্টস না হলেও বিভিন্ন আন্ডারওয়াটার স্পোর্টস যেমন – আন্ডারওয়াটার হকি ও আন্ডারওয়াটার রাগবিতে স্নরকেল ব্যবহৃত হয়। এমনকি অনেক সময় পানির নিচে বিভিন্ন গবেষণার কাজে স্নরকেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।