সুন্দর নিরীহ প্রাণী পাণ্ডা। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে পাণ্ডা একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। প্রাণিবিদদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাত্র ২ হাজারের মত পাণ্ডা অবশিষ্ট আছে পৃথিবীতে। তার ওপরে পাণ্ডাদের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন এক বিপদ।
চীনের একটি পাণ্ডা প্রজনন সেন্টারে সম্প্রতি দুটি পাণ্ডা মারা গেছে 'ক্যানিন ডিসটেম্পার' (প্রধানত পশুদের কাশি এবং দুর্বলতাদায়ক ব্যাধি) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। এই রোগের সাথে মানব শরীরের 'হাম' রোগের অনেকটা মিল রয়েছে।
শুধুমাত্র ২টা পাণ্ডাই মারা যায়নি, একটি পাণ্ডা জীবনমৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর নতুন করে আরেকটি আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে। তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো প্রাণী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সেটা নিশ্চিত নয়।
কিন্তু যদি এই ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে যে ২ হাজার পাণ্ডা জীবিত আছে তাদের জীবনও হুমকির মুখে পড়বে।
ক্যানিন ডিসটেম্পার ভাইরাস প্রথমদিকে কুকুরের মাঝে সংক্রমিত হতো। তবে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এসব পোষা প্রাণীদের রোগ সারানো যেত। কিন্তু বন্য প্রাণী যেমন মারটেন (নেউলজাতীয় প্রাণীবিশেষ), শিয়াল, সিল এবং বর্তমানে পাণ্ডা এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।
চীনের জিয়ানে যেখানে এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে সেখানে ২৫টি পাণ্ডার বাস ছিল। ইতোমধ্যেই এই ব্রিডিং সেন্টারটি বন্ধ করে সেখানকার প্রাণীগুলো অন্যান্য ব্রিডিং সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই ভাইরাসটি হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমদিকের লক্ষণগুলো সহজে চোখে ধরা পড়ে না। চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন ইয়েপেং বলেন, ‘সম্ভবত বহু বছরে এই ভাইরাস কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে’।
এই ভাইরাস এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীর দেহে দৈহিক তরল পদার্থের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সাধারণত খাবার এবং পানির মধ্য দিয়ে ছড়ায় এ ভাইরাস। ভাইরাসটি তিন থেকে ছয়দিনের মধ্যে বিস্তারলাভ করে। আট দিনের মাথায় প্রাণীর মলমূত্র মাধ্যমে সংক্রমণ হওয়া শুরু হয়।
ক্যানিন ডিসটেম্পার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো হচ্ছে- কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর ইত্যাদি। আক্রান্ত হলে পাণ্ডার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ। তবে ভাইরাস যদি পাণ্ডার স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে তবে বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৫ শতাংশ।