মহাকাশে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর কথা প্রথম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে৷ কিন্তু নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পটি তখন আলোর মুখ দেখেনি। তবে এখন আশা করা হচ্ছে আগামী ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে পারে।
সার্কভুক্ত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা অনেক আগেই নিজেদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে৷ কিন্তু নিজস্ব উপগ্রহ না থাকায় আমাদের দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোকে বিদেশি অপারেটরদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের( বিটিআরসি) তথ্যমতে, শুধু সম্প্রচারের জন্য বছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকলে টাকাগুলো দেশেই থাকত। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেশি-বিদেশি চ্যানেল দেখা সহজ হতো। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) গত ১৬ সেপ্টেম্বরের সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়৷ এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা৷ এর আগে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ খরচ কমছে ২৮৫ কোটি টাকা৷
প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুনে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে সেটা এক দফা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন করা হয়৷ আর এখন আশা করা হচ্ছে, ২০১৭ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপগ্রহের নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে৷
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় উপগ্রহটির গ্রাউন্ড লোকেশন হবে। আর স্পেস লোকেশন ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে জিওস্টেশনারি অরবিটে হবে। লোকেশন পেতে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের (আইটিইউ) মাধ্যমে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্তারস্পুৎনিকের মালিকানাধীন ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।
বঙ্গবন্ধু উপগ্রহে ট্রান্সপন্ডার থাকবে ৪০টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ ১২টি ব্যবহার করা হবে। বাকিগুলো ভাড়া দেয়া হবে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশকে ভাড়া দিয়ে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে। উপগ্রহটিরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য একটি নতুন কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।