বলুন তো রৌপ্যমুদ্রাটি কোন বাক্সে?

সম্ভাব্যতা (Probability) নিয়ে একটি মজার ধাঁধা হলো বার্ট্রান্ড’স বক্স প্যারাডক্স (Bertrand's box paradox)। জোসেফ বার্ট্রান্ড নামক এক ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে এই ধাঁধাটি প্রকাশ করেন। ধাঁধাটি এরকম:

মনে করি, আমাদের কাছে ৩টি বাক্স রয়েছে। একটি বাক্সে রয়েছে ২টি স্বর্ণের মুদ্রা, আরেকটি বাক্সে রয়েছে ২টি রূপার মুদ্রা ও সর্বশেষ বাক্সটিতে রয়েছে ১টি স্বর্ণমুদ্রা ও ১টি রৌপ্যমুদ্রা। তিনটি বাক্সই বন্ধ, তাই আমরা আগে থেকে বুঝতে পারবো না কোন বাক্সে কোন ধরনের মুদ্রা রয়েছে। এখন আপনি নিজের ইচ্ছা থেকে যেকোনো একটি বাক্স বেছে নিলেন এবং বাক্সটি থেকে একটি মুদ্রা বের করে দেখলেন যে আপনার মুদ্রাটি একটি স্বর্ণমুদ্রা। আপনার বাক্সে আরো একটি মুদ্রা রয়েছে তবে আপনি জানেন না যে অপর মুদ্রাটি কি স্বর্ণমুদ্রা নাকি রৌপ্যমুদ্রা। এখন প্রশ্ন হল, আপনার বাক্সের অপর মুদ্রাটিও একটি স্বর্ণমুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা কত?

সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে অপর মুদ্রাটি স্বর্ণমুদ্রা হবার সম্ভাবনা হলো ৫০% বা ১/২ ভাগ। কারণ, অপর মুদ্রাটি হয় স্বর্ণমুদ্রা হবে অথবা রৌপ্যমুদ্রা হবে। কিন্তু গাণিতিক হিসাব-নিকাশের পর দেখা যায় যে অপর মুদ্রাটিও স্বর্ণমুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা আসলে ২/৩ ভাগ বা প্রায় ৬৬% ! সাধারণভাবে যদিও মনে হয়েছিল যে অপর মুদ্রাটি স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রা হবার সম্ভাবনা সমান সমান, বাস্তবে অপর মুদ্রাটিও স্বর্ণমুদ্রা হবার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। কিভাবে? এর উত্তর দেওয়া হলো:

বোঝার সুবিধার্থে আমরা ৩টি বাক্সে কিভাবে মুদ্রাগুলো রয়েছে তা বের করে নেই। স্বর্ণমুদ্রাকে G এবং রৌপ্যমুদ্রাকে S দ্বারা প্রকাশ করি। একটি বাক্সে দুটি স্বর্ণমুদ্রা (GG) রয়েছে, একটি বাক্সে দুটি রৌপ্যমুদ্রা (SS) রয়েছে এবং অন্য বাক্সটিতে একটি স্বর্ণমুদ্রা ও একটি রৌপ্যমুদ্রা (GS) রয়েছে। এখন একটি বাক্স নেওয়ার পর তা থেকে একটি মুদ্রা বের করলে যখন দেখা যায় যে সেই মুদ্রাটি G বা স্বর্ণমুদ্রা, তখন আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে সেই বাক্সটি SS ছিল না কারন SS বাক্সে কোন স্বর্ণমুদ্রা বা G নেই। বাকি থাকে GG এবং GS । GG বাক্সের দুটো মুদ্রাই স্বর্ণমুদ্রা তাই সেখান থেকে যেকোনো একটি মুদ্রা নিলে তা অবশ্যই স্বর্ণমুদ্রা হবে। তবে GS বাক্স থেকে যেকোনো একটি মুদ্রা নিলে তা স্বর্ণমুদ্রাও হতে পারে আবার রৌপ্যমুদ্রাও হতে পারে। তাই GS বাক্স থেকে একটি কয়েন নিলে তা স্বর্ণমুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% বা ১/২ ভাগ। অর্থাৎ এই দুটি বাক্সে মোট ৩টি স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে যার মাঝে ২টি রয়েছে GG বাক্সে এবং একটি রয়েছে GS বাক্সে। আমরা যেকোনো একটি বাক্স বেছে নিয়েছি যার মাঝ থেকে একটি স্বর্ণমুদ্রা বের হয়েছে। অপর মুদ্রাটিও স্বর্ণমুদ্রা হতে হলে সেটা GG বাক্স হতে হবে।

প্রশ্ন হলো, আমরা যে স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছি সেটা কোন বাক্সের? GG নাকি GS? দুই বাক্সের মাঝে থাকা ৩টি স্বর্ণমুদ্রার প্রতিটির বাছাই হবার সম্ভাবনা সমান এবং তা হলো ১/৩ ভাগ। GG বাক্সে থাকা দুইটি স্বর্ণমুদ্রার বাছাই হবার মোট সম্ভাবনা (১/৩ + ১/৩) ভাগ বা ২/৩ ভাগ। আর GS বাক্সে থাকা একমাত্র স্বর্ণমুদ্রাটির বাছাই হবার সম্ভাবনা ১/৩ ভাগ। তাই আমরা প্রথমে যে কয়েনটি বেছে নিয়েছিলাম সেটা GG বাক্স থেকে আসার সম্ভাবনা ২/৩ ভাগ। এই জন্যই অপর মুদ্রাটিও স্বর্ণমুদ্রা হবার সম্ভাবনা হচ্ছে ২/৩ ভাগ।

সম্ভাব্যতার সুত্র দিয়েও এটি প্রমান করা যায় –

GG থেকে একটি কয়েন নিলে সেটা স্বর্ণমুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা, P (GG) = ১

SS থেকে একটি কয়েন নিলে সেটা স্বর্ণমুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা, P (SS) =০

GS থেকে একটি কয়েন নিলে সেটা স্বর্ণমুদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা, P (GS) = ১/২

এই ৩টি বাক্স থেকে GG বাক্সটি বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা হলো:

\frac{P(GG)}{P(GG)+P(SS)+P(GS)} = \frac{1}{1+0+1/2} = \frac{2}{3}

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন