বিশ্বকাপের দল পরিচিতি : পাকিস্তান

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১তম আসর। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এ আসর মাঠে গড়ানোর আর বাকি মাত্র ৩ দিন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুতে গড়াচ্ছে বিশ্ব সেরা নির্ধারণের লড়াই। এবার এতে অংশ নিচ্ছে ১৪টি দল। বিশ্বকাপের এই দলগুলোর ধারাবাহিক পরিচিতির ৮ম পর্বে আজ থাকছে পাকিস্তান

২৩ বছর আগে ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তান বিশ্বকাপ নিয়েই ঘরে ফিরেছিল। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে পরাজিত করে প্রথম শিরোপা জিতে ইমরান খানের দল। ১৯৭৯ থেকে টানা চার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের কৃতিত্ব পাকিস্তানের। ১৯৯২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের তারপর আর কোনও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাদের।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে ফাইনালে গিয়েও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাস্ত হয়। এর পরের দুই বিশ্বকাপ ২০০৩ এবং ২০০৭ এ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় দলটিকে। ২০০৭ বিশ্বকাপ পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বিভীষিকাময় একটি টুর্নামেন্ট। ২০০৭-এর বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লজ্জাজনকভাবে হেরে যায় পাকিস্তান। আর ওই রাতে হোটেল কক্ষ থেকে পাকিস্তান কোচ বব উলমার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারনা করা হয় হারের ধাক্কা সামলাতে না পেরেই স্ট্রোক করে মারা যান তিনি।

২০১০-১১ সালে তিন ক্রিকেটারের স্পট ফিক্সিং কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে হতবিহ্বল পাকিস্তান তখন শহীদ আফ্রিদীর নেতৃত্বে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। এবার সেই মেলবোর্নেই অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল। কিন্তু ইমরান খানের জায়গা কি নিতে পারবেন মিসবাহ উল হক?
নিজেদের দিনে ক্রিকেট মাঠে তাদের কঠিন ম্যাচ সহজে জিতেছে অনেকবার।

আবার উল্টো সহজে জেতার ম্যাচে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যাওয়ার নজিরও পাকিস্তানের কম নয়। এ কারণেই ক্রিকেটবিশ্বে আনপ্রেডিক্টিবল হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান।সর্বশেষ আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ৭ নম্বরে আছে এই দলটি। এ পর্যন্ত তারা ১০টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে মোট খেলেছে ৬৪টি ম্যাচ, জিতেছে ৩৬টি, হেরেছে ২৬টি এবং ২ টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।

পাকিস্তানের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক জাভেদ মিয়াদাদ নির্বাচকদের গড়া এবারের পাকিস্তান দলটি নিয়ে মােটেও সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, ‘আলৌকিক কিছু ঘটলেই ১৯৯২-এর পুনরাবৃত্তি হবে।’ সেরা দুই স্পিনার সাঈদ আজমল ও মোহাম্মদ হাফিজের না খেলাটা পাকিস্তানের জন্য সুখকর নয়।

অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে ঠাঁই পাননি অফস্পিনার সাঈদ আজমল। একই কারণে হাফিজ বোলিং করতে না পারলেও স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ঠাঁই পেয়েছিলেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছেন স্কোয়াড থেকে। ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে দল থেকে বাদ পড়েছেন দুই পেসার জুনায়েদ খান ও উমর গুল।

অভিজ্ঞ হাফিজের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে নাসির জামশেদকে ডেকেছে পাকিস্তান। এছাড়া মিডলঅর্ডারে ইউনুস খান, উমর আকমল, মিসবাহ, শোয়েব মাকসুদ রয়েছেন। স্লগ ওভারে আফ্রিদীর বিকল্প নেই।পাকিস্তানের মূল ভরসা ইউনুস, আফ্রিদী, মিসবাহ। ভঙ্গুর পাকিস্তান দলে একমাত্র ধারাবাহিক ফর্মে আছেন পঞ্চমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে নামা শহীদ আফ্রিদী।

টুর্নামেন্টের গ্রুপ-বি তে অ্যাডিলেডে প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপে দেখা হচ্ছে পাকিস্তানের। বিশ্বকাপে ভারতকে কখনো হারাতে না পারার পাকিস্তানী কষ্টটাকে এবার মুছে ফেলতে চান চল্লিশোর্ধ মিসবাহ।

“সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতকে হারাতে চাই। নিজেদের উজাড় করে দিয়ে খেলতে চাই আমরা। ভাঙতে চাই সেই শেকল” বলেছেন মিসবাহ। গ্রুপ-বি’তে পাকিস্তানের সাথে আরো আছে দক্ষিণ অফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে এবং আরব আমিরাত।

একনজরে পাকিস্তান দল

বিশ্বকাপে অংশগ্রহন: ১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই অংশ নেয়।

সেরা সাফল্য: ১৯৯২ তে বিশ্বকাপ জয়।

কোচ: ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান)

এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াড:  মিসবাহ-উল-হক (অধিনায়ক) আহমেদ শেহজাদ, নাসির জামশেদ, সরফরাজ আহমেদ, ইউনিস খান, হারিস সোহেল, উমর আকমল, শোয়েব মাকসুদ, শহীদ আফ্রিদী, ইয়াসির শাহ, মোহাম্মদ ইরফান, এহসান আদিল, সোহেল খান, রাহাত আলি ও ওয়াহাব রিয়াজ

যিনি নজর কাড়তে পারেন: হারিস সোহেল, শহীদ আফ্রিদী।

বিশ্বকাপ মিস করছেন এমন তারকা: সোহেল তানভির, উমর গুল, সাঈদ আজমল, জুনায়েদ খান, মোহাম্মাদ হাফিজ, শোয়েব মালিক।

শেষ বিশ্বকাপ: অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদী, অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক এবং ইউনিস খান।

রিপ্লাই লিখুন:

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন