১৯৩০ সাল থেকে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়। তখন থেকে এই বিশ্বকাপ বিজয়ীকে পুরষ্কার হিসেবে ২টি কাপ দেয়া হয়েছে। ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দেশকে দেয়া কাপটি ছিল জুলে রিমে কাপ। ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে আমরা যে কাপটি দেখি সেটির নাম ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি।
শুরুতে এই কাপের নাম ছিল মূলত ‘ভিক্টরি’, ‘ওয়ার্ল্ড কাপ’ কিংবা ‘কাপ দুমুন্ডে’। ১৯৪৬ সালে সাবেক ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমের সম্মানে ট্রফিটির পুনঃনামকরণ করা হয় ‘জুলে রিমে’ (Jules Rimet)। উল্লেখ্য, ১৯২৯ সালে তিনিই প্রথম বিশ্বকাপের প্রস্তাব পাস করেছিলেন ফিফাতে। তিনি ফ্রান্স ফুটবলের প্রশাসকও ছিলেন।
জুলে রিমে ট্রফির নকশা করেছিলেন ফ্রান্সের ভাস্কর অ্যাবেল লাফ্যর। সাদা-হলুদ মার্বেলের ভিত্তির উপর স্বর্ণ ও রূপা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এটি। লম্বায় ১৪ ইঞ্চি আর ওজন ছিল ৩.৮ কেজি। বিজয়ের দেবী নামে পরিচিত প্রাচীন গ্রীক দেবী ‘নাইকি’র আদলে তৈরি করা হয়েছিল জুলে রিমে কাপ।
জুলে রিমে কাপের রয়েছে রোমাঞ্চকর ইতিহাস। ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে জুলে রিমে কাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জুলে রিমে ছিল ইতালিয়ানদের দখলে। জার্মানির নাৎসী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তৎকালীন ফিফা সভাপতি অট্টোরিনো বারাস্সি রোমের এক ব্যাংক থেকে জুলে রিমে ট্রফি গোপনে সরিয়ে রোমে নিয়ে যান এবং একটি জুতার বাক্সের ভেতরে ভরে তার নিজের বিছানার নীচে লুকিয়ে রাখেন।
তবে দীর্ঘদিন পর জুলে রিমে ট্রফি চুরি হয়ে যায় ইংল্যান্ড থেকে! ওয়েস্ট মিনিস্টার সেন্টার হলে এক প্রদর্শনী থেকে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায় ১৯৬৬ বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র চার মাস আগে। মাত্র সাতদিন পরই ট্রফিটি সাউথ লন্ডনের এক পার্কে পিকলস নামের কুকুর খুঁজে পায়। এরপরই গোপনে ট্রফিটির রেপ্লিলিকা তৈরি করে ফিফা।
প্রদর্শনীর জন্য এরপর থেকে জুলে রিমে ট্রফি আর বের করা হয়নি। ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করার পর ১৯৩০ সালের আসল জুলে রিমে ট্রফি তাদেরকে একেবারেই দিয়ে দেওয়া হয়। রিও ডি জেনিরোতে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের হেডকোয়ার্টারে বুলেটপ্রুফ এক কাঁচের ক্যাবিনেটে ট্রফিটি রাখা হয়।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৮৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ট্রফিটি আবারও চুরি হয়। ৪ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও শেষ পর্যন্ত আর ট্রফিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, ট্রফিটি গলিয়ে ফেলা হয়েছিল। জুলে রিমে ট্রফির শুধুমাত্র একটি টুকরা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল যেটি বর্তমানে ফিফা হেডকোয়ার্টারে সংরক্ষিত আছে।
আসল কাপটি উদ্ধার করা না গেলেও ব্রাজিল একটা রেপ্লিকা তৈরি করে নেয়। ১৯৮৪ সালে ১.৮ কেজি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি ট্রফিটি ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়।