মস্কোতে ম্যামথ শাবক ইয়ুকা

প্রায় ৪০ হাজার বছর আগেরকার একটি ম্যামথের মৃতদেহ পাওয়া গেছে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে। তবে এবার কোন ফসিল নয়, এতো বছর ধরে আশ্চর্যজনকভাবে অত্যন্ত সুরক্ষিত অবস্থায় থাকা আস্ত মৃতদেহটাই খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।

প্রাপ্তবয়স্ক ম্যামথ আকারে প্রায় একটা হাতির সমান হলেও এই ম্যামথটি এতো বড় নয়। এটি একটি বাচ্চা ম্যামথ। ২০১০ সালে কয়েকজন বিজ্ঞানী রাশিয়ার অনেক উত্তরে ইয়াকুটিয়া নামক অঞ্চলে খুঁজে পায় এই ম্যামথটিকে। তারা বাচ্চাটির নাম রাখেন 'ইয়ুকা'।

মৃতদেহটি প্রথমে জাপানে ও তাইওয়ানে প্রদর্শিত করা হয় এবং গত মঙ্গলবার এটি মস্কোতে রাখা হয় প্রদর্শনীর জন্য।

ইয়াকুটিয়ার একজন গবেষক 'অ্যালবার্ট প্রতোপোপভ' জানিয়েছেন, ইয়ুকার বিভিন্ন নিদর্শন থেকে বুঝা যায় যে বরফ যুগে মানুষ খাবারের জন্য ম্যামথ শিকার করতো।

এই ম্যামথটি অবশ্য মানুষের হাতে মারা পড়েনি। বরং তার গায়ের বিভিন্ন আঘাতের দাগ দেখে ধারণা করা হচ্ছে অন্য কোন ঘাতক প্রাণীর আক্রমণেই মারা গিয়েছিলো ইয়ুকা। ইয়ুকার বয়স সে সময় ৬-৯ বছরের মধ্যে ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।

গবেষক প্রতোপোপভ অারো জানিয়েছেন, ইয়ুকার মৃতদেহটি প্রায় ৩৮ হাজার বছরের পুরনো। তবে অন্য অনেক গবেষকই বলছেন যে এটি প্রায় ৩৯ হাজার বছর আগের। তবে যত হাজার বছর পুরনোই হোক না কেন, ইয়ুকার মৃতদেহটি খুবই ভালো অবস্থায় রয়েছে।

রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর বরফ একটি বিশাল রেফ্রিজারেটরের কাজ করেছে। এ কারণেই এতোদিন পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় আছে এটি। ইয়ুকার মৃতদেহটি এতই ভালো অবস্থায় আছে যে এর শরীর এবং টিস্যু এখনো নরম রয়েছে আর গায়ের বড় বড় পশমগুলোও লালচে রঙেরই রয়ে গিয়েছে।

এমনকি এটির মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশই এখনো পুরোপুরি ভালো অবস্থায় আছে যেটি কিনা গবেষকদের জন্য জ্ঞানের একটি নতুন দরজা উন্মুক্ত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এবার জানিয়ে দিচ্ছি, ম্যামথ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য। পূর্ণবয়স্ক একটি ম্যামথ উচ্চতায় প্রায় ৪ মিটার বা ১৩ ফিট হত আর ওজন হত ১০ টন পর্যন্ত। রাশিয়া আর চীনের উত্তরাঞ্চল থেকে ইউরোপ পর্যন্ত আর উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যেত ম্যামথ।

পরিবেশ বিপর্যয় আর মানুষের শিকারের কারণে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় বিশালাকায় এই প্রাণী। তবে পশমী ম্যামথ ১০ হাজার বছর আগেও দেখা যেত বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। যদিও ধারণা করা হয় অ্যালাস্কা আর সাইবেরিয়ার দ্বীপগুলোতে তারও অনেক পরে ছোট ছোট দলে দেখা যেত এদের।

গবেষকরা ইতোমধ্যেই লােমশ ম্যামথের পশম বিশ্লেষণ করে তাদের জেনেটিক কোড বের করে ফেলেছেন। কারও কারও ধারণা যদি ইয়ুকার মধ্যে কোন জীবিত কোষ খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে ক্লোন করা যেতে পারে ম্যামথের।

তবে সে সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন প্রতোপোপভ। তিনি জানিয়েছেন এতো বছর পরে ইয়ুকার মধ্যে জীবিত কোষ থাকার কোন সম্ভাবনাই নেই।  

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন