অটোচক্র

আচ্ছা মোটর গাড়ি, লঞ্চ, এরোপ্লেন ইত্যাদিতে কোন ধরণের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় তা কি জানো ? কিংবা এইসব যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে কি ব্যবহার করা হয় তা কি বলতে পারবে ?

জ্বালানি পুড়ানোর উপর নির্ভর করে ইঞ্জিনকে দুইভাগে ভাগ করা হয়।

১) বহির্দহ ইঞ্জিন ( External Combustion Engine ) অর্থাৎ যে ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন ক্রিয়া ইঞ্জিনের মূল অংশের বাহিরে ঘটে। এর একটি উদাহারণ হচ্ছে বাষ্পীয় ইঞ্জিন।

২) অন্তর্দহ ইঞ্জিন  ( Internal Combustion Engine অর্থাৎ যে ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন ক্রিয়া ইঞ্জিনের মূল অংশের ভিতরে ঘটে। পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিন অন্তর্দহ ইঞ্জিনের উদাহারণ। গাড়িতে ও এরোপ্লেনে এই ধরণের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।

বলতে পারবে গাড়িতে কিভাবে পেট্রোল ইঞ্জিন কাজ করে ?

পেট্রোল ইঞ্জিনে দহন প্রকোষ্ঠের (Combustion Chamber )  নিচে একটি সিলিন্ডার থাকে। সিলিন্ডারের মধ্যে একটি Intake Valve ও একটি Exhaust Valve থাকে। সিলিন্ডারের মধ্যে ইস্পাতের তৈরি একটি পিস্টন উঠানামা করে। পিস্টনটি ইঞ্জিনের প্রধান Shaft এর সাথে Crankshaft  দ্বারা আটকানো থাকে। প্রধান Shaft এর সাথে একটি ফ্লাই হুইল যুক্ত থাকে। পিস্টনের গতির ফলে প্রধান Shaft এবং সাথে সাথে ফ্লাই হুইলে ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। গ্যাসের দহনের ফলে অনেক গরমের হাত থেকে সিলিন্ডারটিকে রক্ষা করার জন্য এর চারদিকে নল দিয়ে অবিরাম পানি প্রবাহিত করা হয়।  

এই ইঞ্জিনে পিস্টন দুইবার সামনে ও দুইবার পিছনে অর্থাৎ এই চারবার গতির সময়ে মাত্র একবার জ্বালানি সরবারহ করে বলে এই ইঞ্জিনটিকে চতুর্ঘাত ইঞ্জিন বা Four Stroke Engine বলে। তোমরা বুঝতে পারছো যে, চারটি ঘাতের সমন্বয়ে পেট্রোল ইঞ্জিনের ক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে।

প্রথম ঘাতে পিস্টনটি উপর থেকে নামে ও Intake Valve টি খুলে যায়। এর ফলে কিছু জ্বালানি Combustion Chamber হয়ে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। এই ঘাতের নাম গ্রহণ ঘাত ( Intake Stroke )

দ্বিতীয় ঘাতে পিস্টনটি উপরে উঠে ও দাহ্য মিশ্রণকে এর আয়তনের প্রায় এক পঞ্চমাংশে সংকুচিত করে। এই ঘাতের সময় Intake ও Exhaust Valve বন্ধ থাকে। এই ঘাতের নাম সংকোচন ঘাত ( Compression Stroke )

তৃতীয় ঘাতে স্পার্ক প্লাগ ( Spark Plug ) দ্বারা মিশ্রণে অগ্নি সংযোগ করা হয়। এর ফলে একটি বিস্ফোরণ ঘটে ও দহনের জন্য অনেক তাপ উৎপন্ন হয়। গ্যাসের প্রসারণের ফলে পিস্টনটি প্রচণ্ড বেগে বাইরের দিকে সরে আসে। এই ঘাতেও দুইটি Valve বন্ধ থাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে এই ঘাতেই ইঞ্জিনটি কাজ করে। তাই, এই ঘাতের নাম কার্যকর ঘাত ( Effective Stroke )

চতুর্থ ও সর্বশেষ ঘাতে পিস্টনটি উপরে উঠে ও Exhaust Valve টি খুলে যায়। তাই, দগ্ধ গ্যাস ঐ পথে বের হয়ে আসে। Exhaust Valve টি খুলে গেলেও Intake Valve বন্ধ থাকে। গ্যাস নির্গমন শেষ হলে আদি অবস্থায় পুনরায় ফিরে আসে ও নতুন চক্র শুরু হয়। এই ঘাতের নাম নির্গমন ঘাত ( Exhaust Stroke )। 

১৮৮৬ সালে ডঃ অটো সর্বপ্রথম সফলতার সাথে এই ইঞ্জিন চালু করেন বলে এই চারটি ঘাতের ক্রিয়াকে অটোচক্র বলা হয়।

 

                    

    

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন